কুড়িগ্রামে মৎস ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টার নারী কৃষক ও তাঁত সেন্টার পরিদর্শন
-16-09-2025.jpg)
প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সরকারি কাজের মাঝেই স্থানীয় উদ্যোগে পরিচালিত তাঁত প্রোডাকশন সেন্টার পরিদর্শন ও নারী কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি এসব কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন, বেসরকারি এনজিও এসোয়েশন ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট (এএফএডি)-এর নির্বাহী প্রধান সাইদা ইয়াসমিন প্রমুখ।
উপদেষ্টা এএফডি কর্তৃক পরিচালিত সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামের ৬০জন নারী কৃষকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি বন্যা-প্রবণ এলাকায় কৃষি ও জীবিকাকে কীভাবে আরো টেকসই ও স্থায়িত্বশীল করা যায়, সে সর্ম্পকে সমাধান খোঁজার জন্য নারী কৃষকদের মতামত নেন।
প্রান্তিক নারী কৃষকরা তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে উপদেষ্টাকে অবগত করেন। পাশাপাশি তিনি নারীদের উৎপাদিত বস্তায় আদা চাষের প্লট পরিদর্শন, বীজ বপন ও বেড পদ্ধতিতে সবজিচাষ, ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন এবং প্রাকৃতিক উপায়ে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করেন।
এরপর তিনি এএফএডি সংস্থার তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও প্রোডাকশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রান্তিক নারীদের তাঁত মেশিনে বিভিন্ন ধরনের কাপড় তৈরি,পণ্যের মান ও বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করেন এবং নারীদের আত্মনির্ভরশীল উদ্যোগ দেখে সন্তুুিষ্ট প্রকাশ করেন।
এসোয়েশন ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট (এএফএডি)-এর নির্বাহী প্রধান সাইদা ইয়াসমিন উপদেষ্টাকে জানান, সংগঠনটি কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মরত স্থানীয় পর্যায়ের নারী উন্নয়ন সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন ধরে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহনের লক্ষ্যে , স্থানীয় পর্যায়ে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা স্থানীয় জাত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, “কুড়িগ্রামের নারী কৃষকরা শুধু ফসল উৎপাদনেই নয়, পরিবার ও সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে তাদের কাজকে টেকসই করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগকে সমন্বয় করা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসন সবসময় এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগে সহযোগিতা করবে।”
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “আজ এখানে এসে আমি গর্বিত। আমি দেখেছি কিভাবে আপনারা (নারী কৃষকরা) প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা ধরে রেখেছেন। বিশেষ করে বস্তায় আদা চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট ও তাঁতকেন্দ্রিক আয়বর্ধক কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়। নারী কৃষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব ছাড়া টেকসই কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাত গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আপনারা যে সমস্যার কথা বললেন বন্যার ক্ষতি, টেকসই আশ্রয়ের অভাব, বাজারজাতকরণে সমস্যা, এগুলো সমাধানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই, প্রতিটি নারী কৃষক শুধু শ্রমিক নন, তারা যেন উদ্যোক্তা ও নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি দপ্তর, বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা কাজ করছি যাতে নারী কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, বাজার সংযোগ এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। এএফএডি’র মতো সংস্থাগুলো এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।” তিনি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরকারি দপ্তরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহবান জানান, যাতে নারী কৃষকদের জন্য সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছায়।
(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫)