আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সিলেটের সাদা পাথর লুটের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের সময় ইঞ্জিন চালিত ট্রলারসহ একজনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়েছে। 

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে কীর্তনখোলা নদী তীরের সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহাবাজ (উলালঘুনী) এলাকার কিংজম হোটেলের সন্নিকট থেকে এসব সরকারি ব্লক লুট হচ্ছিলো।
গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে ওইদিন দিবাগত রাত এগারোটার দিকে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় ব্লক লুটের স্থানে হাজির হন বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারিক। এরপূর্বে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের সাথে জড়িতরা কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ট্রলারসহ চালককে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছেন ওই ছাত্রদল নেতা। আটক ট্রলার চালক শাহে আলম হাওলাদার বরিশাল বন্দর থানার কাউয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কাউনিয়া থানার ওসি মো. নাজমুল নিশাত বলেন-রাষ্ট্রীয় সম্পদ শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের সাথে আর কারা জড়িত আছে তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য আটক ট্রলার চালক শাহে আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন-বেশ কয়েকদিন থেকে ওই এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের ব্লকগুলো রাতের আঁধারে ট্রলারযোগে লুট হচ্ছিলো। আর এ লুটের সাথে প্রত্যক্ষভাবে মিলন নামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারী ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন-প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা কখনও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতেও ১২/১৩ জনের একটি দল ব্লক লুট করতে আসে। কিন্তু ছাত্রদল নেতা ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগ মুহুর্তে রহস্যজনকভাবে ট্রলার চালককে রেখে বাকিরা সবাই পালিয়ে যায়।

বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারিক বলেন-স্থানীয়দের কাছে ব্লক লুটের বিষয়টি শুনে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলোনা। যেকারণে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে নিয়ে আসলে প্রকৃত ঘটনা কি তা দেখতে আসি। তিনি আরও বলেন-আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ব্লক লুটের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কৌশলে সটকে পরেন। কিন্তু ট্রলারসহ চালক শাহে আলম হাওলাদার পালাতে পারেননি। তাকে আমরা আটক করে বিষয়টি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করি। পরবর্তীতে কাউনিয়া থানার ওসি মো. নাজমুল নিশাত ঘটনাস্থলে এসে আটক শাহে আলমসহ ব্লক ভর্তি ট্রলারটি তাদের জিম্মায় নিয়েছেন।

স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. মিরাজ হোসেন ও তানভির আহম্মেদ অভি জানিয়েছেন-আটক ট্রলার চালক শাহে আলম তাদের জানিয়েছেন, তিনি পলাশপুর এলাকার রাজিব নামের এক ব্যক্তির ট্রলারের চালক। তার ট্রলারটি সোহাগ গাজী ও কবির গাজী নামের দুই ব্যক্তি ভাড়ায় ঠিক করে জানিয়েছেন-এই ব্লকগুলো ঠিকাদারের নির্দেশে তারা ট্রলার ভর্তি করে নিয়ে যাবেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেহালগঞ্জে।
ওই সংবাদকর্মীরা আরও জানিয়েছেন-ট্রলার চালককে আটকের পর সে সাকিল নামের এক ব্যক্তিকে ফোনে ধরিয়ে দেয়ার পর তিনি (সাকিল) জানিয়েছেন-পানি উন্নয়নে বোর্ডের একজন ঠিকাদার তাদের ব্লক নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের কাছে এর কাগজও রয়েছে। ব্লকগুলো পটুয়াখালীতে নেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে ট্রলার চালক এবং মোবাইল ফোনের ওই ব্যক্তির (সাকিল) ব্লক নিয়ে যাওয়ার গন্তব্যের কথা দুইধরনের হওয়ায় বিষয়টি সংবাদকর্মীদের সন্দেহ হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানিয়েছেন-স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা খোকন, মিলনসহ তাদের অন্যান্য সহযোগিরা দীর্ঘদিন থেকে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লকগুলো রাতের আধারে ট্রলার ভর্তি করে লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আরও জানিয়েছেন-লুট করে নেওয়া ব্লকগুলো খোকন ও মিলন মেশিনের সাহায্যে ভেঙে পাথর বানিয়ে বিক্রি করছেন।

বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম তারিক বলেন-সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, দেশব্যাপী যারাই যেকোন ধরনের অপরাধ করছে, সবদোষ বিএনপি তথা ছাত্রদলের ওপর চাঁপিয়ে দিয়ে অন্যসব রাজনৈতিক দল কিংবা তৃতীয়পক্ষের প্রকৃত অপরাধীরা আড়াল হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা বরিশালে যেন না ঘটে সেইলক্ষ্যেই আমাদের অভিভাবক ও বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একজন কর্মী হিসেবে রাতের আঁধারে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছি। তিনি আরও বলেন-ব্লক লুটের ঘটনায় যদি কাউকে ধরা না যেতো, তাহলে দেখা যেতো দিনের আলোতে এই লুটের ঘটনাও বিএনপি তথা ছাত্রদলের ওপর চাঁপিয়ে দেয়া হতো।

তরিকুল ইসলাম তারিক বলেন-যারা তারেক রহমানকে মন থেকে ভালবাসেন সেইসব ছাত্রদল নেতাদের প্রতি আহবান করছি, এখন থেকে যেখানে যেকোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের খবর পাওয়া যাবে, সেখানেই তাৎক্ষনিক সংবাদকর্মীদের নিয়ে ছুটে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জনগনের মাঝে তুলে ধরবেন।

উল্লেখ্য, কীর্তনখোলা নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বরিশাল নগরীকে রক্ষা করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় কনফিডেন্স গ্রুপ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শহর রক্ষা বাঁধ নির্মান করেন। বেশ কয়েক বছরের মধ্যে বাঁধের একাধিকস্থান ধসে পরায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বর্ষায় আতঙ্ক দেখা দেয় স্থানীয়দের মাঝে। এরইমধ্যে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের ঘটনায় সেই আতঙ্ক এখন চরম আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। স্থানীয়রা ব্লক লুটের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫)