সাতক্ষীরার চোরাচালানী মন্টুর ট্রলারে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ ৫, বাড়ি ফিরেছে ৭ জন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দক্ষিণ হাড়দ্দহ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে কুখ্যাত চোরাচালানি হাফিজুর রহমান মন্টুর ট্রলারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেয়ে মায়ানমার সীমান্তে আটক সাতজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে। তবে বুধবার সন্ধ্যায় কৌশলে একটি ট্রলারে পালিয়ে আসতে যেয়ে চারজন সাগরে ডুবে তাদের সলিল সমাধি হয়েছে মর্মে জানা গেছে। এছাড়া ১০ সেপ্টেম্বর কোস্ট গার্ড গুলি চালানোয় ট্রলার থেকে সাগরে লাফিয়ে পড়া ইমরানের আজো খোঁজ মেলেনি।
এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়রী করার চেষ্টা করা হলেও পালিয়ে থাকা মন্টু ও তার ভাই রবিউলের হুমকিতে তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। নিখোঁজ হওয়া শ্রমিকদের শান্তি কামনায় শুক্রবার দক্ষিণ হাড়দ্দহ শাহী মসজিদে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
ফিরে আসা শ্রমিকরা হলেন, দক্ষিণ হাড়দ্দহ গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে মনিরুজ্জামান, শাহজাহানের ছেলে নাহিদ হোসেন, গোলাম হোসেনের ছেলে রনি, হাফিজউদ্দিনের ছেলে আবুল হোসেন, ফজর আলীর ছেলে ইউনুস আলী,আব্দুর রহিমের ছেলে ছোট্টু ও আব্দুল খালেকের ছেলে জাহিদুল ইসলাম।
নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেন, একই গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে খাদিবুল ইসলাম,আব্দুল খালেকের ছেলে আক্তার হোসেন, আবুল হাসানের ছেলে আবু জাহিদ সুমন, সোহরাব হোসেনের ছেলে জিয়ারুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী বাবলুর ছেলে ইমরান হোসেন। তবে ভোমরা ফুলতলার আব্দুল্লার ছেলে শাওনের সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে মন্টুর আরো তিনটি ট্রলারে থাকে মায়ানমার সীমান্তে আটকে পড়া ৩৮ জনের সম্পর্কে জানা যায়নি।
বাড়িতে ফিরে আসা মনিরুজ্জামানের পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান,৪ সেপ্টেম্বর মন্টুর কথামত তার ভাই রবিউলের ডাকে সুন্দরবনের গহীনে সাগরে ভারতীয় ট্রলার থেকে থ্রি পিস,শাড়ি, কসমেটিকস, ইমিটেশন গহনাসহ বিভিন্ন চোরাচালানি পন্য মন্টুর মালিকানাধীন ট্রলারে তুলে মায়ানমারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মনিরুজ্জামানসহ ১৩ জন। টেকনাফ থেকে সট রাস্তায় মায়ানমার পৌঁছাতে যেয়ে কোস্ট গার্ড ওই ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমরান সাগরে পড়ে যায়।
একপর্যায়ে তাদের ট্রলার মায়ানমার সীমান্তের সাগরে আটকে পড়ে। গত বুধবার তারা ট্রলার নিয়ে তড়িঘড়ি করে ফেরার সময় টেকনাফ সীমান্তে কোস্টগার্ড এর ট্রলারে ধাক্কা খেয়ে ছিদ্র হয়ে ডুবে যায়। ভাসমান অবস্থায় সাগর থেকে ২০ হাজার টাকায় একটি ট্রলার মনিরুজ্জামান ও ইউনুসকে উদ্ধার করে। তবে খাদিবুল,আক্তার,আবু জাহিদ সুমন ও সোহরাবের জামাতা জিয়ারুলকে পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে তাদের সলিল সমাধি হয়েছে। শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে দক্ষিণ হাড়দ্দহ শাহী মসজিদে তাদের জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইমাম তৌহিদুর রহমান।
তবে মনিরুজ্জামান, নাহিদ, রনি, আবুল হোসেন, ইউনুস আলী,ছোট্টু ও জাহিদুল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে। তবে ভোমরার শাওন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিখোঁজ হওয়া এক শ্রমিকের বাবা জানান, থানায় মিসিং জিডি করতে চেয়ে মন্টু ও রবিউলের ভয়ে তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসেন।
এ ব্যাপারে হাফিজুর রহমান মন্টু ও তার ভাই রবিউল ইসলামের সাথে কথা বলা যায়নি। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিলো।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫)