স্টাফ রিপোর্টার : গত বছরের ১৪ জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি বলেননি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটিই জানিয়েছেন শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জেরার সময় এমন দাবি করেন তিনি। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের সময় তিনি এই কথা জানান।

এর আগে, পর পর দুই দিন জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন গণঅভ্যুত্থানের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ ইসলামের দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাখ্যান করেন শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, সারাদেশে আন্দোলনে কোনো বাধা দেয়নি সরকার। শেখ হাসিনাও আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি বলেননি। তার কথার মর্ম সঠিকভাবে না বুঝে আন্দোলন তীব্রতর করা হয়েছিল।

পরে সাক্ষী বলেন, মূলত আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি বলে আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের উসকানি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

আমির হোসেন জেরায় আরও বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন দমনে ‘ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ বলে দেওয়া বক্তব্যটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত অভিমত ছিল। জবাবে এটি সত্য নয় উল্লেখ করে সাক্ষী নাহিদ আইনজীবীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, সেক্রেটারির বক্তব্য কি কখনো ব্যক্তিগত হয়? দলের পক্ষ থেকে তিনি বলেছেন। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেহেতু তার বক্তব্য দলের ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

এক পর্যায়ে আমির হোসেন বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালানো হয়নি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদেরও নির্যাতন চালায়নি ছাত্রলীগ। আন্দোলনে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসায় বাধাও দেওয়া হয়নি। এ সময় সাক্ষী বলেন, এটি সত্য নয়।

এছাড়া জেরায় আইনজীবী বলেন, জানমাল রক্ষার স্বার্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। জবাবে নাহিদ বলেন, আন্দোলন দমন করার উদ্দেশেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও ঘেরাও করা হয়েছিল।

আইনজীবীর দাবি, সরকারকে বেআইনিভাবে উৎখাত করার উদ্দেশে গত বছরের ১৮ জুলাই সর্বস্তরের জনগণকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান সমন্বয়করা।

জেরা শেষে এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের অপমানিত করেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, যদি কোনো রাজাকারের নাতিপুতি থাকে- কথাটা এমন ছিল। কিন্তু তা ঢালাওভাবে ছাত্ররা নিজেদের গায়ে নিয়ে আন্দোলন বেগবান করেছে। অর্থাৎ বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য তাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল।

এদিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে ট্রাইব্যুনালে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন নাহিদ ইসলাম। দুপুরে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিরতি দেওয়া হয়। বিরতি শেষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আগামী রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫)