শরীরে আগুন দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা
.jpeg)
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : কিছুদিন পরই সন্তানদের নিয়ে আমেরিকায় স্বামীর কাছে যাওয়ার কথা ছিলো গৃহবধূ ঝর্ণা বেগমের (৩৫)। স্বামীর কাছে না গিয়ে অভিমানে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে বেছে নিলেন আত্মহত্যার পথ। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে আজ রবিবার সকালের দিকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী গ্রামে।
নিহত ঝর্ণা বেগম আমেরিকা প্রবাসী হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান তালুকদারের স্ত্রী।
কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিন তেলের বোতল ও গ্যাস লাইট জব্দ করেছে।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছানা নেমে এসেছে। ঝর্ণা বেগম তার বড় ছেলে হাফেজ সাকিব তালুকদারকে (১৮)নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। ছোট ছেলে ইউসুফ তালুকদার (১০) পাশ্বর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামে একটি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে লেখাপড়া করে।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশি শাওন বলেন, সকাল আনুমানিক ১১ টার দিকে কাকির (ঝর্ণা বেগম) রুম থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় রুমের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে দেখি শুধু ধোয়া বের হচ্ছে সাথে শরীরের পোড়া গন্ধ। পরে আশেপাশের লোক ডেকে শাবল দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে দেখি পুরো শরীর পুড়ে গেছে। নির্তেজ শরীর ফ্লোরে পড়ে লেপ্টে রয়েছে।
ঝর্ণা বেগমের বড় ছেলে হাফেজ সাকিব তালুকদার (১৮) বলে, বাবা প্রায় ১০ বছর ধরে আমেরিকা প্রবাসী। গতবছর সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন। মা, আমি ও ছোট ভাই ইউসুফ তালুকদার (১০) পাসপোর্ট বাবা নিয়ে গেছেন। আমি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। প্রশিক্ষণ শেষ হতে আর কিছুদিন সময় লাগবে । এরপরই আমাদের আমেরিকা চলে যাওয়ার কথা। সেখানে বাবা ছাড়াও ৩ চাচা ও ১ ফুফু তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন । মা কেন যে এমনটা করলো আমি বুঝতে পারছি না।
ঝর্ণা বেগমের প্রতিবেশী কোটালীপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মাসুদ তালুকদার বলেন, ঝর্ণা বেগম একজন পর্দানশীল নারী ছিলেন। এলাকার মানুষের বিপদে আপদে সহযোগিতা করতেন। ঝর্ণা বেগমের স্বামী, দেবর, ভাসুর, ননদ সবাই পরিবারসহ দীর্ঘ বছর আমেরিকা বসবাস করছেন। এ পরিবারটির সদস্যরা এলাকার মানুষের কাছে খুব প্রিয়ভাজন। এমন পরিবারের এ দুর্ঘটনা বেদনদায়ক। পুরো এলাকার মানুষ শোকহত হয়ে পড়েছে।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, দুপুরে খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। ঘটনাস্থল থেকে কেরসিনের বোতল ও গ্যাস লাইট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এটি আত্মহত্যা। আত্মহত্যার কারণ জানাযায় নি। হয়তো কোন অভিমানে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আগুনে ঝর্ণা বেগমের শরীরের প্রায় ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে ও চেহারা বিকৃত হয়েগেছে। এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তারপরও উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫)