স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উৎসবকে ঘিরে টাঙ্গাইলে এক হাজার ২৪৭টি মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মৃৎশিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় মাটির প্রতিমাগুলো উৎসব উপযোগী হয়ে উঠছে। আর মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

জানা গেছে, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রমতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীর বোধন ও মহাপঞ্চমী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্যে দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী এবং ৩০ সেপ্টেম্বর মহা অষ্টমী অনুষ্ঠিত হবে। ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দুর্গাদেবী গজে বা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আগমন করবেন। আর দোলা বা পালকিতে চড়ে ফিরে যাবেন।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১ হাজার ২৪৭টি পূজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাউৎসব। এর মধ্যে মধুপুর উপজেলায় ৫৯টি, ধনবাড়ীতে ৩৫টি, ঘাটাইলে ৭০টি, কালিহাতীতে ১৬৩টি, গোপালপুরে ৫৫টি, ভুয়াপুরে ৩৭টি, টাঙ্গাইল সদরে ২১৪টি, নাগরপুরে ১২৯টি, দেলদুয়ারে ১২৩টি, মির্জাপুরে ২৫৭টি, বাসাইলে ৭০টি এবং সখিপুরে ৩৫টি পূজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের শ্রী শ্রী কালিবাড়ি, থানাপাড়া, সাবালিয়া, রেস্ট্রিপাড়া, কলেজপাড়া, প্যারাডাইস পাড়া পূজা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রতিমায় চলছে শেষ মুহূর্তের রং-তুলির আঁচড়। দম ফেলার ফুরসত নেই এখন কারিগরদের। এরই মধ্যে শুরু হয়েছেন তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডেকোরেটরা। কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যথাসময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই দুর্গা দেবীর আরাধনার জন্য মণ্ডপগুলো প্রস্তুত করা হবে।

প্রতিমা তৈরির কারিগররা বলেন, প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। এর মধ্যেই দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির প্রায় কাজ শেষের দিকে। এখনও কিছু প্রতিমায় রংয়ের বাকি কেবল।

জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্ট এর সভাপতি অমল ব্যানার্জি জানান, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে তাদের সব প্রস্তুতি শেষের দিকে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রতি আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের সাথে আলোচনা সভা শেষ হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আমাদেরও সেচ্ছাসেবক কর্মী দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি আরও জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর টাঙ্গাইলে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সরকারে পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এ ছাড়া টাঙ্গাইল পৌরসভার পক্ষ থেকে এর আওতাধীন ১১০টি মন্ডপের জন্য ৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। পূজাকে ঘিরে জেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার জেলার পুজা মণ্ডপগুলোতে ৯৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি, র‌্যাব, আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও মোবাইল টিম ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে।

জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, টাঙ্গাইলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গা উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে পূজা উদযাপন উপলক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক সভা সম্পন্ন হয়েছে। সকলের প্রানবন্ত অংশগ্রহণে গত বছরের ন্যায় এবারও উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে শারদীয় দুগোর্ৎসব।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫)