বরিশালে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : হঠাৎ করে ফের বরিশাল বিভাগজুড়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের বরিশাল ও বরগুনা জেলায় এবার শুরু থেকেই ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণের হার বিরাজ করছে। আগস্টে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হলেও সেপ্টেম্বরে আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, গত জুলাই ও আগস্টে ধারাবাহিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেকারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি কমলেও থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বরিশালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। এ সময় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ছিল। তবে জুলাই ও আগস্ট মাসে তা কমে আসলেও ফের সেপ্টেম্বরে তা বাড়তে শুরু করেছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের (১ জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৬২৪ জন রোগী। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১২ হাজার ৭৩ জন। পাশাপাশি ৫২৩ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ জন। মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে বরগুনার হাসপাতালেই মারা গেছেন ১১ জন। বাকি ১৮ জনের ১৭ জন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন পটুয়াখালী হাসপাতালে মারা গেছেন।
সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ বছর বয়সের কিশোরী তাইয়েবা আক্তার মৃত্যুবরণ করেন। মৃত তাইয়েবা বরগুনা জেলার পাথরঘাটার বাসিন্দা আবু মুসার মেয়ে। একইদিন ডেঙ্গু জ্বরে নতুন আক্রান্ত হয়ে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৪৯ জন। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করা মহিমা আক্তার (২৬) পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার আমরাতলা গ্রামের মো. হাসান (২৫) ও একই উপজেলার কাকচিরা গ্রামের সিদ্দিক মোল্লা (৪৫) একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সূত্রমতে, ওইদিন (২১ সেপ্টেম্বর) বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বিভাগের অন্য জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বরিশাল ও বরগুনায় সংক্রমণ আবার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। থেমে থেমে অল্প বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন ছোট পাত্রে, নিচু জায়গায় কিংবা বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকায় তা এডিস মশার লার্ভার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। যেকারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন-রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুবাহিত মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সচেতনতার বিকল্প নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ৩৬৩ জন। মৃতের সংখ্যা ছিল শুন্যের কোঠায়। এরপর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিলো ৭০৫ জনে। ওই মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়। মে মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৮৭ জনে। তবে মে মাসে আক্রান্ত বাড়লেও কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। জুন মাসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৭৩১ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ জনে। জুলাই মাসে ৮ হাজার ৮২ জন রোগী আক্রান্ত হন। আর মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে।
এছাড়া আগস্ট মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩২৭ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছে ১৯ জনে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬২৪ জনে আর সর্বমোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছে ২৯ জনের কোঠায়। অর্থাৎ চলতি মাসের ২২ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভাগে দশজন মৃত্যুবরণ করেছেন।
(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫)