রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ী সদর উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আলীমুজ্জামানের বিরুদ্ধে জাল সনদ ব্যবহার, বয়স জালিয়াতি, পদোন্নতিতে প্রতারণা ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারী, রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক শেখ, গত ৪ সেপ্টেম্বর দুদক চেয়ারম্যান এবং ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয় বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা বিভাগ এবং রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কাছেও।

ওই অভিযোগপত্রে জেলার কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ী ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমানের বিরুদ্ধেও সনদ জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়েছে।

অভিযোগপত্র এবং সংশ্লিষ্ট সনদপত্র বিশ্লেষণে জানা গেছে, মোঃ আলীমুজ্জামান ১৯৮৭ সালের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন তহশীল অফিসে পিওন পদে অষ্টম শ্রেণির সনদ অনুযায়ী চাকরিতে যোগদান করেন। ওই সনদ অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ছিল ২৫/১১/১৯৬৮। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাশের সনদে জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয় ১৪/০৬/১৯৭৩, যা পূর্বের সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, চাকরিতে যোগদানের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর ৫ মাস, যা সরকারি চাকরির ন্যূনতম বয়স (১৮ বছর) অনুসারে সম্পূর্ণ অবৈধ।

এছাড়াও অভিযোগপত্রে আরো জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার সময় (১৯৮৯) তার প্রকৃত বয়স ছিল ২১ বছর, যা পরীক্ষার নির্ধারিত বয়সসীমার বাইরে। এজন্য তিনি বয়স কমিয়ে জাল জন্মতারিখ উল্লেখ করেন। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, যা ২০০৪ সালে তদন্তে প্রমাণিত হলে দ্বি-বর্ষ ইনক্রিমেন্ট স্থগিত রাখা হয়। তবে, অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি নিয়ম ভেঙে পূর্ণ বেতন উত্তোলন করে আসেন।

২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খানখানাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সরকারি কাচারিতে পরিবারসহ বসবাস করেও বাড়িভাড়া ভাতা গ্রহণ করেন, যা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর ১৪(২) ধারা অনুযায়ী অনিয়ম। বর্তমানে তিনি ৩০ জনের মধ্যে পদোন্নতির গ্রেডেশন তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে মোঃ আলীমুজ্জামান বলেন, আমি এই মুহূর্তে কোনো সাক্ষাৎকার দিতে পারবো না। বিষয়টি ইউএনও স্যারের তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে যদি আমি দোষী প্রমাণিত হই এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, তবে তা মাথা পেতে মেনে নেবো। আমি আমার স্যারের নির্দেশ ছাড়া কিছু বলতে পারি না।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পায়রা চৌধুরী বলেন,ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আলীমুজ্জামানের সনদ ও জন্ম তারিখ জালিয়াতির যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি প্রথম আপনার (সাংবাদিকের) মুখ থেকেই শুনলাম।

অভিযোগকারী আব্দুর রাজ্জাক শেখ বলেন, ভুয়া সনদ ও বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ যদি ৩৮ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করে এবং এখনও পদোন্নতির তালিকায় শীর্ষে থাকেন, তা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ন্যায়ের ওপর বড় আঘাত। এতে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫)