ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রীতম সাহা দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। এই স্বীকৃতি কেবল একটি প্রশাসনিক পুরস্কার নয়, বরং জনসেবা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার নিষ্ঠা, দক্ষতা এবং নেতৃত্বের বাস্তব প্রমাণ। গত রবিবার নীলফামারী জেলা প্রশাসন হলরুমে আয়োজিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির নিয়মিত সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা সনদ প্রদান করেন। সভায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, যা অনুষ্ঠানের মর্যাদা ও তাৎপর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।

প্রীতম সাহার কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৫ সালের ১ জুলাই, যখন তিনি কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি উপজেলাকে একটি রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ শুরু করেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও আইন প্রয়োগ, মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর অভিযান, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং অসাধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ—এসব কার্যক্রম তাকে দ্রুত সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা উল্লেখ করেছেন, তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কিশোরগঞ্জের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডকে নতুন প্রাণ দিয়েছে।

প্রীতম সাহার প্রশাসনিক দক্ষতা কেবল কিশোরগঞ্জেই নয়, এর আগেও আলোচিত হয়েছে। যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিষ্ঠা, সততা ও কার্যকারিতার জন্য জেলার শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়ে শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন করেন। পরবর্তীতে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার কর্মদক্ষতা ও মানবিক উদ্যোগের কারণে তিনি দিনাজপুর জেলার শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পান। এই ধারাবাহিক সফলতা প্রমাণ করে যে তিনি যে দায়িত্বই গ্রহণ করেন, তা সর্বোচ্চ সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন।

শিক্ষাজীবনেও তিনি উজ্জ্বল সাফল্য দেখিয়েছেন। প্রীতম সাহা ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের ওপর তার একাডেমিক পটভূমি তাকে মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলো বোঝার এবং বাস্তবসম্মত সমাধান বের করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তিনি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন।

তার সাফল্য সম্পর্কে মতামত দিতে গিয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, তিনি যোগদানের পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের কাজের গতি অনেক বেড়েছে। জনসেবা সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ ও অংশগ্রহণমূলক কাজের একটি নতুন ধারা শুরু হয়েছে। বাল্যবিবাহের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে তিনি কেবল আইন প্রয়োগেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করেছেন। একইভাবে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পাশাপাশি তিনি তরুণদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও ইতিবাচক কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রীতম সাহা তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “কিশোরগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই আমি অসাধারণ সহযোগিতা পেয়েছি। জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে প্রতিটি দায়িত্ব পালন সহজ হয়ে গেছে। এই স্বীকৃতি কেবল আমার নয়—এটি পুরো কিশোরগঞ্জের মানুষের অর্জন। আমরা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করছি, যাতে কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে একটি রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলা যায়। সামনে আরও অনেক পরিকল্পনা আছে, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চাই। আমি আশা করি, আগামীতেও সবাই একইভাবে পাশে থাকবেন এবং আমরা আরও অনেক সাফল্যের গল্প রচনা করতে পারব।”

তার এই স্বীকৃতি জেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রীতম সাহার মতো উদ্যমী ও সৎ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজের মান আরও উন্নত হবে এবং জনগণের কাছে সরকারি সেবার মান পৌঁছে দেওয়ার গতি বাড়বে। কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষও আশা করছেন, তার নেতৃত্বে উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রম আরও শক্ত ভিত্তি পাবে এবং তিনি আগামী দিনে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।

এই সাফল্য শুধু একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়; এটি একটি দৃষ্টান্ত, যা দেখায় যে দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা এবং জনগণের কল্যাণে আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কত দ্রুত ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

(ওআরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫)