প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কামারের ছড়া সেতু ভেঙে আট বছর ধরে চরম দুর্ভোগে ভুগছেন চার গ্রামের সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর আট বছর পার হলেও আর কোনো নতুন সেতু নির্মাণ হয়নি। সেতুর অভাবে বাঁশের ভাঙা সাকো, ড্রামের ভেলায় করে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী পারাপাড় করছেন।

এলাকাবাসীরা বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় মেকলী ও ছাটকালুয়া গ্রামের মাঝে কামারের ছড়ার ওপর অবস্থিত সেতুটি ¯্রােতের কারণে ধসে পড়ে। এটি ওই এলাকার কামারের ঘাট, মেকলী, ছাটকালুয়া, চতুর্ভুজ ও গড়েরবাজার গ্রামের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের পথ। সেতু ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল শুরু করলেও সংস্কারের অভাবে সেটিও এখন নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে ছিনাই ইউনিয়নের কামারের ছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীরা ড্রামের ভেলায় করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। পাশর্^বর্তী মেকলী গ্রামের লোকজন এবং কুড়িগ্রাম শহরগামী যাত্রীগণ মোটসাইকেল ও বাইসাইকেল নিয়ে ওই সড়কপথে এসে বাঁশের সাকো ও ড্রাম ভেলায় পারাপার হতে না পেরে কয়েক মাইল দূরের পথ ঘুরে যাতায়াত করছেন।

ছিনাই ইউনিয়নের মেকলী গ্রামের জহুর আলী (৫৬) বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর প্রথমে বাঁশের সাঁকো, পরে ড্রামের ভেলা বানিয়ে কোনোমতে যাতায়াত করছি। সামান্য অসতর্কতায় পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। রাতের বেলা এই সাঁকো দিয়ে পারাপাড় সম্ভব নয়।

একই গ্রামের মোজাফ্ফর আলী জানান, রাতে দুর্ঘটনা বা অসুস্থ রোগী হলে পাশের একতা বাজার বা হাসপাতালে যেতে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে ভোগান্তির শেষ নেই। তাছাড়া স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে সেটার জন্যও বাঁশের এই সাকো নিরাপদ নয়।

ছাটকালুয়া গ্রামের আবুল হোসেন (৫৫) বলেন, প্রতি বছর সাঁকো ভেঙে যায়। তখন কয়েক গ্রামের মানুষ টাকা আর ধান তুলে আবার বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানাই। এটা দিয়ে চলাচল করতে ভয় হয়, তবুও উপায় নেই। এখানে একটি ব্রীজ হলে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষের উপকার হবে।’

ছিনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করছেন। বিভিন্ন সময়ে আমরাও নিজেদের থেকে কিছু সহযোগিতা করেছি। সেখানে একটি স্থায়ী ব্রীজ হলে চার গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের উপকার হবে।

রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী আবদুর রশিদ ম-ল বলেন, বিলো ১০০ মিটার প্রকল্পের আওতায় সেখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে।

(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫)