ডাকবাক্স
এক সময়ের আবেগ এখন কেবলই স্মৃতির বাক্স

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লালচে রঙের একটি বাক্স। হয়তো মরিচা পড়েছে, ভাঙা ঢাকনা কাত হয়ে আছে—তবুও তাকে দেখলে মনে পড়ে যায় এক অদ্ভুত সময়ের কথা। সেটি ছিল চিঠির সময়, অপেক্ষার সময়, হৃদয়ের গভীর থেকে লেখা কয়েকটি শব্দের সময়।
ডাকবাক্স—শুধু একটি ধাতব বাক্স নয়, ছিল মানুষের আবেগের গোপন ভাণ্ডার। কারো প্রেমপত্র, কারো পরীক্ষার ফলাফল, কারো দূরদেশে থাকা সন্তানের খোঁজ—সব জমা থাকত তার ভেতরে। প্রতিটি চিঠি মানেই ছিল একেকটি গল্প, একেকটি নিঃশ্বাস, একেকটি দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান।
আজকের দিনে সেই গল্পগুলো যেন নিঃশব্দে বিলীন হয়ে গেছে। ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সে ঢুকে পড়া বার্তা, হোয়াটসঅ্যাপের নোটিফিকেশন, কিংবা ই-মেইলের আনুষ্ঠানিক শব্দাবলি—এসব কিছুতে হয়তো দ্রুত যোগাযোগ হয়, কিন্তু থাকে না সেই হৃদয়ের স্পর্শ। নেই মায়ের হাতের লেখা কালি, নেই প্রিয়জনের অক্ষরে ভরা ব্যাকুলতা।
লেটার বক্স আজ অবহেলায় পড়ে আছে। কেউ আর খামে সিল মেরে ফেলে না, ডাকপিয়নের ঘণ্টাধ্বনি শুনে অপেক্ষা করে না। তবু গ্রামের কোনো কোণে কিংবা শহরের পুরনো গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা মরিচাধরা লাল বাক্স যেন নিঃশব্দে সাক্ষ্য দেয়—একদিন মানুষ এমনভাবেই যোগাযোগ করত, এমনভাবেই হৃদয়ের কথা পৌঁছে যেত প্রিয় মানুষের কাছে।
চিঠি মানেই ছিল ধৈর্যের পাঠ, প্রতীক্ষার সৌন্দর্য। প্রযুক্তি হয়তো সেই প্রতীক্ষাকে মুছে দিয়েছে, কিন্তু তার আবেগকে মুছে দিতে পারেনি। লেটার বক্স তাই আমাদের কাছে এখন স্মৃতির প্রতীক, এক হারিয়ে যাওয়া সময়ের নীরব স্মারক।
হয়তো একদিন নতুন প্রজন্ম বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করবে—
"চিঠি বলতে কি সত্যিই এমন কিছু ছিল?"
আর তখন আমরা চোখ ভিজিয়ে বলব—
"ছিল, সেই চিঠিই আমাদের জীবনকে করেছিল আরও মানবিক, আরও আবেগঘন।"
(ডিসি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫)