ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে ধর্ষিতাকে বিয়ে
মামলা প্রত্যাহার হলো না সৈয়দ রফিকুল ইসলামের

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে চার মাস ধরে এক বিধবা নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার বাদিকে বিয়ে করেও মামলা প্রত্যাহার করতে পারলেন না সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক তথ্য পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন।
আজ বুধবার বাদীনী ও বিয়ের কাবিননামাসহ আপোষনামা নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নজরুল ইসলাম শুনানী শেষে তা না’মঞ্জুর করেন।
আসামী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন (৫২) সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার মৃত সৈয়দ আজিজার রহমানের ছেলে।
ঘটনা ও মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদীনীর স্বামী গত বছরের ২৭ আগষ্ট ক্যান্সারে মারা যান । এ খবর জানতে পেরে পূর্ব পরিচিত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম শাওন তার বাসায় এসে খোঁজ খবর নিতেন ও দেখভাল করতেন। মাঝে মাঝে বাদীনীর মোবাইলে আপত্তিকর ম্যাসেজ দিতেন আসামী শাওন। এরমধ্যে আসামী শাওন বাদীনীর অসহায়ত্বের সূযোগ নিয়ে তার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশার ইঙ্গিত দিলে বাদিনী রাজী না হওয়ায় তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। চলতি বছরের ২০ মার্চ রাত ৯টার দিকে শাওন বাদীনীর বাসায় আসেন। বাদীনীর মাথায় হাত রেখে আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণপূর্বক প্রতারণার আশ্রয় নিয়া এক অপরে বৈধ স্বামী স্ত্রী না হইয়াও আসামী শাওন বাদীনীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। যাহা ধর্ষণের শামিল। বাদিনী এ সময়কার স্থির চিত্র ও ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করেন। এরপর থেকে আসামী শাওন বাদীনীর বাসায় প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতেন ও বাদীনীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। এ সময় বাদীনী বার বার বিয়ে করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে নানাভাবে টালবাহানা করতেন।
এক পর্যায়ে তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে যেয়ে কয়েকজন সাংবাদিক ও সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে যেয়ে আসামীর কয়েকজন সহকর্মী দলিল লেখককে অবহিত করেন। গত ৯ আগষ্ট রাত ৯টার দিকে আসামী শাওন বাদীনীর বাসায় যান। পরদিন বিয়ে করবেন বলে সেখানে রাত্রিযাপন করেন। ১০ আগষ্ট বাদীনীর বাসা ত্যাগ করার সময় চড় থাপ্পড় মেরে বলে যান যে, তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাংগঠণিক সম্পাদক। বিয়ে না করলে তাকে বাদীনী কিছুই করতে পারবে না বলে চলে যান। ওই দিনই বাদীনী সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন ও পরদিন ছাড়া পান। সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা (সেক্সুয়াল এ্যাসাল্ট) করানো হয়। নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। মামলা করার সময় বাদীনীর সহিত সাংবাদিক শাওনের শারীরিক সম্পর্কের ছবি, ভিডিওসহ শতাধিক মোবাইল ম্যাসেজ এবং সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত ছাড়পত্র উপস্থাপন করা হয়।
এ ছাড়াও বাদিনীর বাসায় যাতায়াতের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, পাটকেলঘাটায় বাদীনী ও আসামীর একটি মাংসের দোকানে খাওয়ার ভিডিওসহ কয়েকটি ফুটেজ উপস্থাপন করা হয়। বাদি এ ঘটনায় গত ১৩ আগষ্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বাদীনী। বিচারক মাফরুজা পারভিন ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরার গোয়েন্দা অপরাধ ও তদন্ত শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। মামলাটির তদন্তভার পান উপপরিদর্শক উম্মে কুলসুম বীথি।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে আরো জানা যায়, মামলার খবর পেয়ে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম শাওন অস্থির হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে বাদীনীর হাতে পায়ে ধরে ১৮ সেপ্টেম্বর পলাশপোলের আবু সাঈদের (বিবাহ রেজিষ্টার) কাছে হাজির হয়ে আড়াই লাখ টাকা কাবিনে শাওন বিয়ে করেন ধর্ষিতাকে। কাবিননামার ২১ নং কলামে শাওন তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তান থাকার কথা অস্বীকার করেন। পরে মামলা প্রত্যাহারের জন্য দেন দরবার চালান শাওন। একপর্যায়ে মামলার ধার্য দিনে শাওন ও বাদীনী স্বামী -স্ত্রী হিসেবে বসবসাস করছেন উল্লেখ করে আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোসলেমউদ্দিনের মাধ্যমে বিয়ের কাবিননাম ও আপোষনামা সহকারে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানান। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম আসামী ও বাদীর উপস্থিতিতে শুনানী শেষে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন না’মঞ্জুর করেন।
মামলা প্রত্যাহারের আবেদন না’মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. আলী আশরাফ বলেন, ধর্ষণেল মামলা প্রত্যাহারযোগ্য নয়। কেবলমাত্র তদন্তকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে যথাযথ প্রতিবেদন আসলে মামলা প্রত্যাহার করা যায়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত শাখার উপপরিদর্শক উম্মে কুলসুম বীথি এ প্রতিবেদককে বলেন, ১০ তিন আগে তিনি মামলার নথি তদন্তের জন্য হাতে পেয়েছেন। তদন্ত চলছে। বাদিনী ও আসামীর মধ্যে বিয়ে সংক্রান্ত একটি কাবিননামা তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশ ও সব কিছু যাঁচাই বাছাই করে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তবে সাতক্ষীরায় বেশি ধর্ষণ ও মারপিটের ঘটনায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫)