স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে নির্মিত মেরিনার্স সড়কের বিআইডব্লিউটিএ অফিস সংলগ্ন সৌন্দর্যবর্ধন এলাকায় হঠাৎ গড়ে উঠেছে একটি খাবারের দোকান। ‘ফিরিঙ্গিবাজার ওরশ বিরিয়ানি’ নামের এ দোকান সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য তৈরি বসার স্থান ও বৃক্ষরোপণের জায়গা দখল করে চালু হয়েছে।

প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সড়কটি নির্মাণ করে। নগরীর দক্ষিণাংশে সদরঘাটের সঙ্গে এ সড়কের সরাসরি সংযোগ থাকায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। ফিরিঙ্গিবাজার ব্রিজঘাট, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট ও অভয়মিত্র ঘাটে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন হাজারো মানুষ এ পথ ব্যবহার করে।

কিন্তু সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিরিয়ানির দোকান চালু হওয়ায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। পথচারীরা রাস্তা পারাপারের সময় ঝুঁকিতে পড়ছেন, যা দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাপড় ও ব্যানার দিয়ে ঘেরা একটি সাময়িক কাঠামোর মধ্যে টেবিল-চেয়ার বসানো হয়েছে। উপরে তিরপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সামিয়ানা। ভেতরে লাকড়ির চুলায় রান্নাবান্না চলছে প্রকাশ্যে।

দোকানের ব্যানারে মালিকের নাম বা যোগাযোগ নম্বর না থাকলেও ভেতরে টাঙানো খাবারের মেনুতে দুটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ রয়েছে। নম্বর দুটি মাহিন ও আরমান হোসাইন নামে দুই ব্যক্তির।

খাবারের তালিকায় বিরিয়ানি, মেজবানি মাংস, চনার ডালসহ নানা প্যাকেজের দাম লেখা আছে। এমনকি অনুষ্ঠানেও খাবারের অর্ডার নেওয়া হয় বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দোকানটি সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের জায়গা দখল করে শুধু পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, বরং জনদুর্ভোগও বাড়াচ্ছে। দোকানের রান্নাবান্না থেকে ধোঁয়া ও বর্জ্য ছড়িয়ে আশপাশে দূষণ তৈরি হচ্ছে।

ফিরিঙ্গিবাজার ব্রিজঘাটের নিয়মিত যাত্রী আব্দুর রহমান ও সোহেল পারভেজ বলেন, “সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের জায়গায় দোকান বসানোয় পথচারীরা ঝুঁকিতে পড়ছে। রাস্তা পারাপারে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।”

একই মত প্রকাশ করেন পথচারী কামাল হোসেন ও আবিদ রহমান। তাদের অভিযোগ, “চসিক এ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”

ফিরিঙ্গিবাজারের ওরশ বিরিয়ানি দোকানের ক্যাশে দায়িত্বে থাকা মাহিন ও আরমান হোসাইনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাইলে তারা জানান, “দোকানের মূল মালিক ফিরিঙ্গিবাজারের মোহাম্মদ লেয়াকত। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) থেকে সড়কে বিরিয়ানির দোকান পরিচালনার অনুমোদন নিয়েছে কি না, তা আমরা বলতে পারছি না।”

চসিকের বিভিন্ন বিভাগকে স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা একাধিকবার বিষয়টি জানালেও এখনো কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হয়নি। নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানে নানা স্থাপনা সরালেও এই দোকানটি অক্ষত থাকার বিষয়টি জনমনে প্রশ্ন তুলছে।

চসিক অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা বলেন, “জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা আন্তরিক। তবে এটি প্রকৌশল বিভাগের আওতায় নয়, রাজস্ব বা নগর পরিকল্পনা শাখার বিষয়। উনাদের জানাতে পারেন বিষয়টি।”

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সচিবালয় বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেসী শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা কে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে কেউ আগে অভিযোগ করেনি। আমরা বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি। তারপর অবশ্য আইনি ব্যবস্থা নেবো।'

চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল জানান, “বিষয়টি জানানো হয়েছে, শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

পরে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন এর রবি নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ হয়নি ফোন। পরে হোয়াটসঅ্যাপে জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির তথ্যচিত্র পাঠিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও কোন মন্তব্য জানানো হয়নি।

(জেজে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫)