সত্য ও মিথ্যা: প্রকৃতির বৈপরীত্য

আবীর আহাদ
প্রকৃতির বিচার মাঝে মাঝে আমাদের চোখে ভয়ানক ও বিস্ময়কর মনে হয়। পৃথিবীর মঞ্চে দেখা যায়: যারা কুটিল, জটিল ও নির্মম, যাদের হাতে সত্য, সুন্দর ও মানবতা নিরাপদ নয়, তারাই যেন প্রকৃতির কাছ থেকে অকৃপণভাবে সবকিছু পায়। অথচ যারা সত্যনিষ্ঠ, সৎ ও নীতিমান, তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে অভাব, সংগ্রাম আর দুঃখের দীর্ঘ পথচলা। মনে হয়: সত্য কি তবে দুর্বল, আর মিথ্যাই বেশি শক্তিশালী?
মিথ্যার মোহিনী শক্তি
মিথ্যা মানুষের মনে সহজেই স্থান করে নেয়। সত্যকে প্রমাণ করতে হয়। যুক্তির আলোয় দাঁড় করাতে হয়। অনেক সময় তা তিক্ত ও কষ্টকর হয়। কিন্তু মিথ্যা? সেটি আসে সুদৃশ্য মোড়কে। মধুর প্রতিশ্রুতিতে। অলীক আশার আলো জ্বালিয়ে। মানুষ তাই তাতে বিভ্রান্ত হয়, প্রলুব্ধ হয়। সমাজ, রাজনীতি থেকে ব্যক্তিজীবন, সবখানেই মিথ্যা এক ধরনের “মোহিনী শক্তি” হয়ে ওঠে।
শাসক ও ক্ষমতাধরেরা এই শক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে যুগে যুগে। উপনিবেশবাদীরা সভ্যতার নামে শোষণ চালিয়েছে, নাৎসিরা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের নামে বিভীষিকা সৃষ্টি করেছে, আবার আজও মিথ্যার জালে আবদ্ধ করে সাধারণ মানুষকে ব্যবহৃত করা হচ্ছে। তাই মিথ্যা অনেক সময় সত্যের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মনে হয়।
সত্যের ধীর অথচ অটল পথ
তবু ইতিহাসের আয়নায় তাকালে আমরা দেখি, মিথ্যার সেই জৌলুস ক্ষণস্থায়ী। রোমান সাম্রাজ্য ধসে পড়েছে, হিটলারের নাৎসি শক্তি বিলীন হয়েছে, উপনিবেশবাদের প্রাসাদ ভেঙে পড়েছে। মিথ্যা যত শক্তিশালী মনে হোক, তার ভিত ফাঁপা।
অন্যদিকে, সত্য ধীর, নীরব, প্রায়শই নির্যাতিত হলেও অবিনাশী। সত্য মানুষের হৃদয়ে একবার আলো জ্বালালে তা আর নিভে না। যেমন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সত্য,মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলার ন্যায়ভিত্তিক সংগ্রাম- সবই প্রমাণ করে, সত্য হয়তো বিলম্বে আসে, কিন্তু এলে চিরস্থায়ী হয়।
শেষকথা
মিথ্যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। প্রলোভন দেখায়। স্বপ্ন দেখায়। সত্য মানুষকে কষ্ট দেয়। পরীক্ষা নেয়। তবুও মুক্তি দেয়। প্রকৃতির বৈপরীত্যময় বিচারে মিথ্যা যতই দীপ্ত হোক না কেন, শেষ হাসি সবসময় সত্যের পক্ষেই থাকে।
লেখক :মুক্তিযোদ্ধা লেখক ও বিশ্লেষক।