টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী ইউনিয়ন
পানির দাম হঠাৎ বৃদ্ধিতে ১৩০০ গ্রাহকের ক্ষোভ

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : সরবরাহ লাইনের পানির দাম গ্রাহক প্রতি ১শ' টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন প্রকার ঘোষণা বা নোটিশ ছাড়াই ইউপি চেয়ারম্যান পানির দাম বৃদ্ধি করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি অবগত আছেন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিষয়টি অবগত নয় বলে জানিয়েছেন।
এতে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের এক হাজার ৩০০ গ্রাহকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পানির গ্রাহক পাটগাতী গ্রামের রহমত আলী বিশ্বাস, গিমাডাঙ্গা গ্রামের আজিম শেখ বলেন , এতদিন আধা ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপের পানির লাইনে ২৫০ টাকা ও পোনে এক ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপের পানির লাইনে ৩০০ টাকা করে মাসিক পানির বিল দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু চলতি মাসে হঠাৎ করে ২৫০ টাকার বিল ৩৫০ টাকা ও ৩০০ টাকার বিল ৪০০ টাকা করা হয়েছে। আমরা বর্ধিত পানির বিল হাতে পাওয়ার পর বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। আমরা বর্ধিত পানির বিল গ্রহণ করার পর ইউনিয়ন পরিষদে ফেরত পাঠাই। পরে ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন গোপনে আমাদের বাড়িতে বর্ধিত পানির বিল রেখে আসে। আমরা পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান সুভাষ বিশ্বাসের কাছে পানির বিল বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পানির বিল বাড়ানো হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, পাটগাতী ইউনিয়নে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ২০১৮ সালে পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে “সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট” নির্মাণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বর্তমানে এই প্লান্টের আওতায় ১ হাজার ৩শ' গ্রাহকের মধ্যে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি পরিচালনার জন্য পাটগাতী গ্রামীন পানি সমিতি গঠন করা হয়। এতে ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। আর উপদেষ্টা হিসাবে রাখা হয় উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে।
গিমাডাঙ্গা পূর্বপাড়া গ্রামের জুয়েল শেখ, মো. মোস্তাকির হোসেন বলেন, প্রতিদিন পানি দেয়ার কথা থাকলেও সপ্তাহে ২ দিন পানি দেয় পরিষদ কতৃপক্ষ। প্রথম দিকে পরিষ্কার পানি দিলেও বর্তমানে ঘোলা পানি দেয়। তবুও প্রতিমাসে আমি ২৫০ টাকা বিল পরিশোধ করে আসছি। কিন্তু এইমাসে হটাৎ ৩৫০ টাকার পানির বিল নিয়ে আসলে আমরা রাখিনি। পরে চেয়ারম্যান জানায় ইউএনও ম্যাডামের নির্দেশে পানির বিল বাড়ানো হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, তাই ১০০ টাকা আমাদের কাছে অনেক। পানির দাম চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের সাথে আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহার।
গিমাডাঙ্গা গ্রামের জিন্নাত শেখ বলেন, প্রথমে পরিষদ থেকে ৪০০ টাকার বিল নিয়ে আসলে আমরা রাখিনি। পরে আমাদের জানালার ফাক-ফোকর দিয়ে সেই বিলের কাগজ রেখে যায় পরিষদের লোকজন। তখন চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি বলেছেন ইউএনও ম্যাডামের নির্দেশে বিল বাড়ানো হয়েছে। বিল না দিলে লাইন কেটে দেবো বলেও হুমকি দেয়।
তবে পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস দাবি করেছেন কমিটির সবাইকে নিয়ে মিটিং করে পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এবিষয়ে ইউএনও ম্যাডামও অবগত রয়েছে। প্রায় দশ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে তাই পানির বিল বাড়ানো হয়েছে।
হটাৎ পনির বিল বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রদীপ মজুমদার বলেন, পদাধিকার বলে পাটগাতী গ্রামীন পানি সমিতির উপদেষ্টা হিসাবে রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগে বিল বাড়ানোর জন্য চেয়ারম্যান মিটিং ডাকলে গ্রাহকদের জানানোর জন্য মাইকিং করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে তারা কি করেছে সেটি আমার জানা নেই।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আক্তার বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে এসে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলো। তখন আমি বলেছি যে বিষয়টিতে আমার এখতিয়ার নেই, সে বিষয়ে আমি কেন কথা বলবো! সেটা আপনাদের ব্যাপার।
(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫)