ফরিদপুরে সরকারি জমি দখল করে ভবন নির্মাণ অভিযোগের সত্যতা পায়নি পৌরসভা

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর পৌরসভার, ৪ নং ওয়ার্ডের মৃগী বাজারে সরকারি জমি দখল করে বিল্ডিং করার অভিযোগের কোনো প্রকার সত্যতা পায়নি পৌরসভা।
সম্প্রতি মৃগী গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব চৌধুরী ওরফে হবি চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃগী বাজারে সরকারি জমি দখল করে বিল্ডিং ও দোকান ঘর করার একটি অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় কানাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা বিএনপি নেতা মো. আব্দুল্লাহ সরদার বাবু ওরফে বাবু সরদার ও স্থানীয় যুবদল নেতা মো. ওয়াসিম শেখ।
ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক বরাবর করা ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ফরিদপুর পৌরসভা থেকে মৃগী বাজারে সরেজমিনে তদন্ত করতে আসেন পৌরসভার সার্ভেয়ার এম. এ. সেলিম নেতৃত্বে একটি সার্ভেয়ার টিম। হাবিব চৌধুরীকে পৌরসভায় তাঁর জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়। পরে বাদী-বিবাদীদের নোটিশের মাধ্যমে উক্ত জমি পরিমাপের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে তাঁদেরকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করে ফরিদপুর পৌরসভা।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মৃগী বাজারে হাবিব চৌধুরীর জমির পরিমাপ করেন ফরিদপুর পৌরসভার একটি সার্ভেয়ার টিম। এসময় অভিযোগকারীগণ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, হাবিব চৌধুরীর পরিবাবরের সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে ফরিদপুর পৌরসভার সার্ভেয়ার মো. জাহিদুর রহমান শেখ উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মসণ করা হয়েছে, এমন একটি প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার ফরিদপুর পৌরসভার থেকে আমাদের একটি টিম তদন্ত করে যান। পরে নোটিশ দিয়ে আজ (শুক্রবার) হাবিব চৌধুরীর জমি পরিমাপের কাজ শেষ করলাম। তবে, এ বিষয়ে অভিযোগের কোনো প্রকার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাবিব চৌধুরী তাঁর নিজের ক্রয়কৃত বৈধ জায়গায়ই তাঁর দোকানপাট ও বিল্ডিংটি করেছেন। তবে, রাস্তা থেকে মুল বিল্ডিং-এ যেতে ব্যবহৃত একটি সিরির কর্ণারে কয়েক ইঞ্চি রাস্তার যায়গায় পড়েছে। কিন্তু তা তেমন গুরুতর নয়। তবুও আমরা তা ভেঙে ফেলতে লাল রঙের মার্ক করে দিয়ে এসেছি এবং বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলার অনুরোধ করে এসেছি।'
মাপের সময় বিবাদী হাবিব চৌধুরী উপস্থিত না থাকলেও তার ছোটভাই মোহম্মদ রতন চৌধুরী, জামাতা মো. আরিফ শেখ ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জমি পরিমাপের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাবিব চৌধুরীর ভাই রতন চৌধুরী উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, 'এটি হয়রানিমূলক অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই নয়, আমার ভাই অসৎ মানুষ নন, জমি মাপার পর তা স্পষ্টতো প্রমানিত হয়েছে।'
এসময় হাবিব চৌধুরীর জামাতা মো. আরিফ শেখ জানান, 'আগেই বলেছিলাম তিনি (হাবিব চৌধুরী) তাঁর জমিতেই দোকান ও বিল্ডিং করেছেন। অনেকবার এই জমি পরিমাপ করা হয়েছে, আজও করা হলো।' আরিফ আরও জানান, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী এখন থেকে এ ব্যাপারে ক্লিয়ার হয়ে গেলেন।'
উল্লেখ করা যেতে পারে, উপরোক্ত অভিযোগকারীগণ ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক বরাবর গত ১০ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ করে জানান যে, স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে সরকারি হালট ও রাস্তার জায়গা দখল করে পাকা বিল্ডিং এবং দোকানপাট তৈরি করেছেন স্থানীয় হাবিব চৌধুরী। পরে, তা পরিমাপের পদক্ষেপ নেয় ফরিদপুর পৌরসভা।
হাবিব চৌধুরী এ অভিযোগের বিষয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে তখন জানান, 'ওই জায়গাটি আমি একটি ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে কিনেছি। এতে অভিযোগপত্রে যে বিল্ডিং এর কথা বলা হয়েছে, সেটির ছয় তলা ইমারত করার জন্য পৌরসভা থেকে নকশার অনুমোদন সহ এবিষয়ে যাবতীয় সরকারি কাগজপত্র আমার আপডেট করা আছে। কাগজপত্রে কোনো প্রকার ঝামেলা নাই। বিষয়টি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করলে ক্লিয়ার হয়ে যাবে মর্মে আশা প্রকাশ করে হাবিব চৌধুরী আরও জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে মনে করছেন তিনি।
আজ শুক্রবার পৌরসভা থেকে জমি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণের পর হাবিব চৌধুরীর কথার উপরোক্ত কথার সত্যতা মিললেও কোনো প্রকার সত্যতা মিলেনি তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের।
এদিকে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও পৌরসভা কর্তৃক জমি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করার পর তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অভিযোগকারীগণ।
(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫)