‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের অর্থই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়েছে’

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার প্রশংসা করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বলেছেন, প্রবাসী আয়ে পাঠানো রেমিট্যান্সই জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়েছে।
“আমাদের অর্থনীতি একেবারে তলানিতে নেমে গিয়েছিল। আপনাদের রেমিট্যান্সই সেটিকে বাঁচিয়েছে। আপনাদের পাঠানো অর্থই আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পেছনে কাজ করেছে।” শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের ম্যারিয়ট মারকুইস (১৫৩৫ ব্রডওয়ে)-এ আয়োজিত “এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিস” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ইউনূস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা অপরিসীম। “আমাদের পর্যাপ্ত তরুণ মানবসম্পদ রয়েছে,” উল্লেখ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি তাদেরকে আত্মবিশ্বাসের সাথে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও নতুন ধারণা নিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি আশ্বাস দেন যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। আঞ্চলিক অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাতটি রাজ্য সমুদ্রবন্দরের সুবিধাবঞ্চিত।
“আমরা যদি তাদের জন্য সমুদ্র উন্মুক্ত করি, তাহলে সবাই উপকৃত হবে,” তিনি বলেন। তিনি আরও যোগ করেন, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে সবাই বাংলাদেশমুখী হবে।
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইউনূস জানান, সামুদ্রিক সম্ভাবনা অন্বেষণে তারা ইতিমধ্যে অনেক অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
“কক্সবাজার-মাতারবাড়ি এখন গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রস্তুত,” তিনি বলেন এবং বঙ্গোপসাগরের গ্যাসসম্পদ উত্তোলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বাংলাদেশের অর্থনীতির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এখন মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে।
আশিক চৌধুরী বলেন, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে “জাতীয় সম্পদ হিসেবে প্রবাসী সমাজকে কাজে লাগানো” শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা হয়। সেশনটি পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
সেখানে আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলালি প্রবাসীরা বাংলাদেশের সম্পদ, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তারা বড় ভূমিকা রেখেছেন।”
অন্য একটি আলোচনাসভা পরিচালনা করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা ইস্যুর উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান।
সে সেশনে বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবীর, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকিবুর রহমান ও এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনীম জারা বক্তব্য রাখেন।
ডা. তাসনীম জারা তার বক্তৃতায় নারী ও যুব সমাজের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “যখন সবাই একসাথে কাজ করে, তখনই ইতিহাস বদলায়। আমরা সবাই মিলে ইতিহাস পরিবর্তন করব।”
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনও বক্তব্য দেন।
দিনব্যাপী আয়োজনে আরও ছিল আকর্ষণীয় বিভিন্ন পর্ব, যেমন পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, নতুন ডিজিটাল অ্যাপ উদ্বোধন ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পৃক্তকরণ কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করা হয় “শুভেচ্ছা অ্যাপ”।
এনআরবি কানেক্ট ডে ছিল একটি বিশেষ সমাবেশ যেখানে ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি ও সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাত থেকে আগত বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিকে একত্রিত করা হয়।
এই আয়োজনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ, নাগরিকসেবা পাওয়ার উপায় এবং প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা জোরদার করার পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও মতামত সরাসরি নীতিনির্ধারক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
(আইএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫)