অমর ডি কস্তা, নাটোর : নাটোরের বড়াইগ্রামে দাদীর দেওয়া জুস খেয়ে ১ বছর ১০ মাস বয়সী নাতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের ইকড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ওই শিশুর নাম নুর ইসলাম। সে পাশ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার সোনাবাজু পুর্বপাড়া গ্রামের শাকিল আহম্মেদ ও পায়েল খাতুন দম্পতির একমাত্র ছেলে। বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ শিশুটির দাদি সখিনা বেগম (৪৫)কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। শিশুটির মৃত্যু রহস্য উম্মোচনের চেষ্টা চলছে। জুসের মধ্যে বিষ মিশিয়ে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত বা প্রমাণ মিললে থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হবে বলে জানায় থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সারোয়ার হোসেন। অভিযুক্ত দাদি সখিনা বেগম গুরুদাসপুরের সোনাবাজু পুর্বপাড়া গ্রামের আব্দুর মোতালেবের স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বড়াইগ্রামের রোলভা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে পায়েল খাতুনের সাথে সোনাবাজু গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে শাকিল হোসেনে সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পুত্রবধূর সাথে কলহ বিবাদ চলে আসছিল শ্বাশুড়ি সখিনা বেগমের। প্রায়ই পুত্রবধুকে তিনি মারপিট সহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। কয়েকদিন আগে মারপিট করলে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে যায় শাকিল হোসেন।

শিশুটির মা পায়েল খাতুন জানান, শনিবার ইকড়ি গ্রামে মামা শ্বশুর শাহাদাত শাহ’র বাড়িতে বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার শ্বাশুড়িও আসেন। দুপুর ১২টার দিকে ওই বাড়িতেই আমার ছেলেটিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখি। দেড়টার দিকে আমার শ্বাশুড়ি আমার ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে জুস খাওয়ায়। তারপর থেকে সে অসুস্থ হয়ে যায়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায় আমার ছেলে বিষাক্ত কিছু খেয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই সে মারা যায়।

অভিযুক্ত সখিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে কিনে নিয়ে আসা জুস আমি খাওয়াইছি। কিভাবে মারা গেল আমি জানিনা। আমাকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় অনেকেরই ধারণা, পুত্রবধূ পায়েল তার ছেলেকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে রেখেছে তাই প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে দাদিও পায়েলের শিশুপুত্রকে জুসের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করে কোল খালি করেছে।

থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সারোয়ার হোসেন আরও জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট সহ শিশুটির পেটের খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ। এটা হত্যাকান্ড প্রমাণিত হলে অবশ্যই অপরাধীকে যথাযথ আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

(এডিকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫)