শরতের কাশফুল বাংলার প্রকৃতির সাদা শোভা

বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, মহম্মদপুর : বাংলার প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ফুটে ওঠে। বর্ষার বিদায়ে যখন আকাশ নীল হয়, মেঘ হয় হালকা আর বাতাসে আসে শীতলতার ছোঁয়া—তখনই শরৎকালকে স্বাগত জানায় সাদা তুলোর মতো দুলে ওঠা কাশফুল।
নদীর ধারে, খোলা মাঠে কিংবা চরাঞ্চলে কাশবন দুলে ওঠে বাতাসে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন সাদা সাগর ঢেউ খেলে যাচ্ছে। সূর্যের আলোয় ঝলমল করা কাশফুল প্রকৃতিকে দেয় ভিন্ন মাত্রা। শরতের আকাশের নীল রঙ আর সাদা মেঘের সঙ্গে মিশে যায় কাশফুলের শুভ্রতা।
বাংলা সাহিত্যে, কবিতা ও গানেও কাশফুল বারবার এসেছে শরতের প্রতীক হয়ে। শরতের আগমন মানেই কাশফুলের উপস্থিতি। দেবী পক্ষের সূচনা, দুর্গাপূজা কিংবা গ্রামীণ জীবনের আনন্দ—সবকিছুর সঙ্গে কাশফুল এক অদৃশ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে। গ্রামবাংলায় কাশবনে শিশুদের খেলাধুলা, কিশোর-কিশোরীদের হাসিখুশি মুহূর্ত আজও চোখে ভাসে। একসময় গ্রামে-গঞ্জে নদীর ধারে কাশবন ছিল সহজেই দেখা যেত। কিন্তু আধুনিক উন্নয়ন, নদীভাঙন ও দখলের কারণে কাশবন এখন অনেকটাই কমে গেছে। তবুও শরতের বার্তা নিয়ে এখনও কোথাও কোথাও দাঁড়িয়ে থাকে শুভ্র কাশফুল।কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং একধরনের মানসিক প্রশান্তির প্রতীক। এর শুভ্রতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় পবিত্রতা, শান্তি ও সরলতার কথা। শহুরে মানুষও যখন হঠাৎ কাশফুল দেখে, তখন তার মনে শৈশবের স্মৃতি কিংবা গ্রামীণ জীবনের টান জেগে ওঠে।
শরতের কাশফুল বাংলার প্রকৃতির এমন এক অনন্য উপহার, যা আমাদের চোখে এনে দেয় স্বপ্নময় শান্তি আর হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে অনাবিল আনন্দ। এই ফুল শুধু প্রকৃতির সাজ নয়, বরং বাংলা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবেগেরও অংশ।
(বিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫)