রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইল সদর উপজেলার বুড়িখালী এলাকায় সড়াতলা গ্রামের মৃত মোমিন উদ্দিন ফকিরের ছেলে ইজিবাইকচালক আকবর ফকির (৬০) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। গোয়েন্দা শাখা ও সদর থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি বাবু সরদারকে (৫৯) গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নড়াইল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

গ্রেফতার বাবু সরদার সদর উপজেলার সড়াতলা গ্রামের মৃত মোসলেম সরদারের ছেলে। বাবু সরদার নিহত আকবার ফকিরের প্রতিবেশী ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে সদর থানাধীন বুড়িখালী এলাকায় বাঁশবাগানের ভেতর থেকে আকবর ফকিরের গলা ও পুরুষাঙ্গ কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠায়।

এ ঘটনায় পরেরদিন শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিহতের ছেলে নাজির ফকির বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এরপর জেলা গোয়েন্দা শাখাসহ পুলিশের একাধিক টিম হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও আসামি শনাক্তকরণে মাঠে নামে। একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও কৌশলগত প্রক্রিয়ায় গোপন সংবাদ পেয়ে গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লোহাগড়া থানার মশাগুনি এলাকায় ব্র্যাক অফিস এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি বাবু সরদারকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বাবু সরদার হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রায় ১০-১২ দিন আগে থেকেই আকবর ফকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি চাকু এবং স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ২০টি অ্যালার্জির ট্যাবলেট কেনেন। হত্যার দিন রাতে আকবর ফকিরকে কৌশলে নির্ধারিত স্থানে ডেকে কোমল পানীয় ‘স্পিড’-এর সঙ্গে ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করায়। এতে আকবর ফকির অচেতন হয়ে পড়লে তাকে গামছার টুকরা দিয়ে হাত-পা গাছে বেঁধে ফেলে এবং চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পরে মরদেহ বিকৃত করার জন্য তার অণ্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ কেটে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে বাবু সরদার হত্যার কারণ হিসেবে জানায়, জমি নিয়ে বিরোধ ছাড়াও নিহত আকবর ফকির দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন তার শাশুড়িকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং তার মেয়ে ও পুত্রবধূর প্রতিও কুদৃষ্টি দেয়। এসব ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই সে একাই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

গ্রেফতার বাবু সরদারকে (২৯ সেপ্টেম্বর) আদালতে পাঠানো হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানায় পুলিশ।

(আরএম/এএস/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫)