স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোরের ঝিকরগাছার সোনাকুড় গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবন্ধী পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর এবার মামলার বাদী মিনি খাতুনকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য লাগাতার হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকির মুখে তিনি ও তার পরিবার এখন বাড়িছাড়া ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আজ শনিবার সকালে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পিতৃহারা মিনি খাতুন এই অভিযোগ করে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মিনি খাতুন লিখিত বক্তব্যে জানান, তারা সাধারণ নিরীহ মানুষ এবং তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। তার পিতা মৃত রফিকুল ইসলাম একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছিলেন। গ্রামের ঘরজামাই জহিরুল এলাকার কতিপয় রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছিল।

এরই ধারাবাহিকতায়, চলতি বছরের ২ রা জুলাই সকাল আনুমানিক ১০ ঘটিকায় ঝিকরগাছা থানাধীন সোনাকুড় গ্রামস্থ জহিরউদ্দিনের চায়ের দোকানের পাশে মেহগনি বাগানে এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে। মিনি খাতুনের অভিযোগ, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি তমেজ উদ্দিনের ছেলে নাজমুল-এর নেতৃত্বে একদল লোক (মব তৈরি করে) তার পিতাকে গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর দীর্ঘ ৪৫ মিনিট ধরে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে।

পিতার এই নির্মম হত্যার বিচার চেয়ে মিনি খাতুন বাদী হয়ে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ঝিকরগাছা আমলী) আদালত, যশোর-এ একটি হত্যা মামলা (মামলা নং সি.আর ৬৬২/২৫) দায়ের করেন।

তবে মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা ও তাদের সহযোগীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মিনি খাতুন জানান, সন্ত্রাসীরা তাকে ও মামলার সাক্ষীদের নমনীয় করতে ভীষণভাবে চেষ্টা ও চাপ প্রয়োগ করছে। তাদের মিথ্যা মিমাংসা করতে এবং মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই তাদের পিছু ধাওয়া করা হচ্ছে এবং নানাভাবে ভয়ভীতি ও ক্ষতির চেষ্টা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তিনি এবং তার পরিবার বর্তমানে বাড়িছাড়া। এমনকি থানা পুলিশের কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা মিলছে না। ফলে পিতৃহত্যার বিচার পাওয়া আজ অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

মিনি খাতুন সমাজের বিবেক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সহিত জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ন্যায্য শাস্তি প্রদানের জন্য আপনারা আমার হতভাগ্য পরিবারকে সাহায্য করুন। যদি আমি কোনো মিথ্যা কিংবা তঞ্চকী ঘটনার বিবরণ দিয়ে থাকি, তবে আমার পাশে দাঁড়ানোর দরকার নেই। সঠিক বিষয়টি যাচাই অন্তে আপনারা আমাকে সাহায্য করুন।

তিনি অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং মামলার আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

(এসএ/এসপি/অক্টোবর ০৪, ২০২৫)