কাপ্তাইয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের প্রস্তুতি

রিপন মারমা, রাঙ্গামাটি : আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হয় প্রবারণা পূর্ণিমা প্রদীপ প্রজ্বলন ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মত এবারেও বর্নিল আয়োজনে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রবারণা উৎসব উদযাপন উপলক্ষে চলছে নানান কর্মযজ্ঞ।
রং-বে রংয়ের বর্ণিল ফানুস তৈরি আর ময়ুরের আদলে রথযাত্রা তৈরিসহ নানা ধরণের রং এ সাজছে বিহারগুলো।আজ থেকে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে রাত জেগে তরুণ-তরুণীরা বৈচিত্র্যময় নানা ধরনের পিঠাপুলি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করবেন। প্রবারণা উৎসব উদযাপন করার শেষ মহুর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পী ও আয়োজকরা।
মারমা ভাষায় ওয়াগ্যোয়াই অর্থ প্রবারণা পূর্ণিমা, আর পোয়ে অর্থ উৎসব। বুদ্ধমূর্তি স্নান, ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল রথযাত্রা, দেবতার মূর্তি (রুছোমা), প্রদীপ প্রজ্বলন, ফানুস ওড়ানো, পঞ্চশীল গ্রহণসহ নানা আয়োজনে উৎসব উদ্যাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এরই মধ্যে এবারের উৎসব আয়োজনের জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে চিৎমরম, রাইখালী, হরিণছড়া,ব্যাঙছড়ি মারমা পাড়া, ওয়াগ্গার নোয়াপাড়া, সাপছড়ি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া,কুকিমারা, মুরালি পাড়া, শিলছড়ি, বারঘোনিয়া, রেশম বাগান,মিতিংগ্যা ছড়িসহ নানা পাড়া মহল্লায় ফানুস (আকাশ প্রদীপ) তৈরির মহোৎসব প্রস্তুতি নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ে আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে।এ উপলক্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকদের কেনাকাটায় ব্যস্ততা দেখা গেছে। আষাঢ়ী পূর্ণিমার পরের দিন থেকে টানা তিনমাসের বর্ষাবাস শেষে নর-নারীরা বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে পঞ্চশিল,অষ্টশিল ও দশশিল গ্রহণ করবেন। এ সময় সকল অহিংসা ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মন্ত্রে দীক্ষিত হন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মানুসারীরা।প্রবারণা পূর্ণিমা পালন উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন বিহারে বিহারে চলবে ধর্মীয় প্রার্থনা। ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে অর্থ ও অন্নদান, ফুল পূজাসহ চলবে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন উপাসক-উপাসিকারা গ্রহণ করবেন সকাল থেকে অষ্টশিল ও দশশিল।
বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উথোয়াইমং মারমা, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থা, কাপ্তাই অঞ্চল সভাপতি অজিত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও সাচিংউ মারমা জানিয়েছেন,প্রবারণা হলো আত্নশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্যি ও সুন্দরকে বরণের দিন।
বিহারে বিহারে দেয়া হবে ধর্মীয় দেশনা। জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় করা হবে বিশেষ প্রার্থনা। সুখ-শান্তি লাভ ও পারিবারিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করবেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। দায়ক-দায়িকারা মোমবাতি, ধুপকাটি প্রজ্বলন আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং (বিভিন্ন ধরনের জল ও খাবার) প্রদানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবেন মহানন্দে।বৌদ্ধ ধর্ম মতে, প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্ধার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল। তাই প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে আজও।
আর আগামীকাল সোমবার(৬ অক্টোবর) পিঠা উৎসব, ফানুসবাতি উড়ানো এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার (৭ অক্টোব) বিকেলে গৌতম বুদ্ধকে রথে বসিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালি নারানগিরি থেকে শুরু করে জোগনাছড়ি এলাকায় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মাঝি পাড়া এসে শেষ হবে। পরে এই দিনে মধ্যরাতে কর্ণফুলী নদীতে ময়ুর আদলেই রথটিকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের এই মহা আয়োজন।
(আরএম/এএস/অক্টোবর ০৫, ২০২৫)