শিতাংশু গুহ


একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকছে না, সেটি হলো ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে জনসংখ্যা ছিলো ১২৩ মিলিয়ন, অর্থাৎ ১২ কোটি ৩০ লক্ষ। তন্মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তানে ৬৫ মিলিয়ন, পশ্চিম পাকিস্তানে ৫৮ মিলিয়ন। এ হিসাবটি সরকারি গুগুল থেকে নেয়া। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের জরিপে মোট জনসংখ্যা ছিলো ৯৩ মিলিয়ন, তন্মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে ৪২.৮ মিলিয়ন, এবং পূর্ব-পাকিস্তানে ৫০ মিলিয়ন। মনে আছে নিশ্চয় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালীকে দাবায়ে রাখতে পারবা না! সোজা অংকের খাতিরে ধরে নেয়া যাক ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে জনসংখ্যা ছিলো ১৩ কোটি, তন্মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তানে সাড়ে ৭ কোটি, পশ্চিম-পাকিস্তানে সাড়ে ৫ কোটি। 

আরো কিছু পরিসংখ্যান দেই: বাংলাদেশে ২০২২ সালের জনসংখ্যা জরীপ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি (১৬ কোটি ৯৮ লক্ষ ২৮ হাজার ৯২১ জন)। পক্ষান্তরে পাকিস্তানে ২০২৩ সালের জনসংখ্যা জরিপ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা হচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি (২৪ কোটি ১৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪৩১ জন + কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তান, আদম শুমারীতে এটি ধরা হয়নি)। আমার মাথাব্যথা হচ্ছে, ১৯৭১-২০২৩ পর্যন্ত পাকিস্তানের জনসংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি থেকে বেড়ে ২৫ কোটি হলে, একই সময়ে (১৯৭১-২০২২) বাংলাদেশের জনসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি থেকে বেড়ে মাত্র ১৭ কোটি হয় কি করে? এটি কি কোন কিছুর ইঙ্গিত দেয়?

সাধারণ গণিতের হিসাবমতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হওয়া উচিত ৩৪ কোটি (২৫ x ৭.৫/৫.৫)। আরো সহজভাবে দেখলে দেখা যাবে পাকিস্তানে জনসংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বেড়েছে, বাংলাদেশে ৫ গুণ বাড়লে সংখ্যাটি ৩৪ কোটি’র বেশি দাঁড়ায়। জন্ম-মৃত্যু হার, ফ্যামিলি প্ল্যানিং, বহুবিবাহ ইত্যাদি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে প্রায় সমান। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটি, থাকার কথা ৩৪ কোটি, তাহলে বাকি ১৭ কোটি কোথায় গেলো? হিন্দুরা বলছে প্রায় ৫ কোটি হিন্দুকে বিতাড়িত হয়েছে? হিসাবটি এরকম: ১৯৭১ সালে ১ কোটি হিন্দু ভারতে গেছে, দেশে বা এদিক-ওদিক হিসাবের বাইরে প্রায় ৫০ লক্ষ হিন্দু, অর্থাৎ মোট দেড় কোটি হিন্দু ছিলো, ৫ গুণ বাড়লে তা দাঁড়াতো সাড়ে ৭ কোটি, আছে ২ কোটি (সরকারি হিসাবে ১ কোটি ৬০ লক্ষ), বাকিরা কই? এছাড়া দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রবাসী, বিদেশে থাকেন।

তাহলে দাঁড়াল ১৭+৫+২=২৪ কোটি। ৩৪-২৪=১০ কোটি গেলো কোথায়? সংখ্যাটি যদি আরো কমিয়ে ধরা হয়, তাহলেও ৬/৭ কোটি মানুষের হদিস নাই? এঁরা কি সবাই ভারতে গেছে? বা নেপালে? বোঝার সুবিধার জন্যে আরো কিছু তথ্য দেই, বাংলাদেশে গ্রোথরেট ৭%, পাকিস্তানে ২.১%? বাংলাদেশে পুরুষ মানুষ বাঁচে ৭৩, পাকিস্তানে ৬৫; মহিলারা বাঁচে বাংলাদেশে ৭৬, পাকিস্তানে ৭০ বছর। জন্মহার বাংলাদেশে ২০.৪%, পাকিস্তানে ২৭.৮% এবং মৃত্যুহার বাংলাদেশে ৫%, পাকিস্তানে ৬.৫%। একমাত্র জন্মহার বাদে সকল পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা পাকিস্তানের চাইতে ঢের বেশি হওয়ার কথা? তা হয়নি, হয়েছে কি? এই লোকগুলো হারিয়ে গেছে?

বাংলাদেশে মানুষ হারিয়ে গেছে, ভারতে মুসলমান হুহু করে বেড়েছে, এর মধ্যে কি কোন যোগসূত্র আছে? এ সময়ে ভারত বেশকিছু সংখ্যক বাংলাদেশীকে পুশব্যাক করেছে, বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলেছে, এ নিয়ে তাদের কিছু করার নেই? টিভিতে এসব ফিরে আসা মানুষগুলো সবিস্তারে জানাচ্ছেন বাংলাদেশে কোথায় তাদের বাড়ীঘর, কখন তাঁরা ভারতে যান, কেন থেকে গেছেন ইত্যাদি। কেউ কেউ বলতে চাইছেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আসলে ১৭ কোটির বেশি, প্রায় ২০ কোটি। তাও যদি হয়, তবুও তো ৫/৭ কোটি মানুষের খবর নাই, কেন?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।