নীলফামারীতে তিস্তার পানি বাড়ছেই, রেড অ্যালার্ট-মাইকিং

স্টাফ রিপোর্টার : ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি আবারও বেড়েছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। একই সঙ্গে স্থানীয়দের সতর্ক করতে মাইকিংও করা হয়েছে।
তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। সকাল ৬টায় পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার দিয়ে, সন্ধ্যা ৬টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ২৮ মিটারে।
তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার ডান তীরের বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে বাঁশের পাইলিং করে বালির বস্তা নিক্ষেপ করছে পাউবো।
তিস্তার তীরবর্তী ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম এবং চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, রবিবার দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে, যা এখনও অব্যাহত। পানির উচ্চতা বাড়ায় ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া ও ফ্লাটপাড়াসহ বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠেছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে, বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার; সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৪৮ মিটার; দুপুর ১২টায় ৫২ মিটার; বিকেল ৩টায় ৫২ দশমিক ১৪ মিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ২৮ মিটার।
ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা ৬টার পর পানি আরও বেড়ে যায়। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত অন্তত ১২ ঘণ্টা তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত থাকতে পারে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। রোববার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও সন্ধ্যা ৬টায় ৮৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ এলাকায় তিস্তার ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, যা মেরামতের কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ডুবে গেছে মাছের খামার, আমন ধান ও সবজির ক্ষেত। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নৌকাই এখন একমাত্র চলাচলের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
চরখড়িবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মিলন বলেন, আমন ধানের খেতগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। সময় যত যাচ্ছে, পানি ততই বাড়ছে। আমরা আতঙ্কে আছি, কখন যে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে যায়।
(ওএস/এএস/অক্টোবর ০৬, ২০২৫)