স্টাফ রিপোর্টার : সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আগে গণভোট ও পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) দাবিতে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট ও পিআরের দাবিতে জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে, তা মোকাবিলাই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ।’

সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন। নাগরিক যুব ঐক্য এ সভার আয়োজন করে। সভায় বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদ, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিলম্ব ও গণভোট আয়োজনের বিতর্ক আসন্ন নির্বাচনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জনগণের রায় নেওয়ার পক্ষে সবাই প্রায় একমত। কেউ কেউ বলছে আগে গণভোট করতে হবে। যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় সেটা নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘গণভোট যারা জটিল করতে চাচ্ছে, আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিন। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াসকে প্রতিহত করতে হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘জনগণ সুষ্ঠু ভোটের জন্য মুখিয়ে আছে। কেউ অনিয়ম করতে চাইলে জনগণই প্রতিহত করবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে।’

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন,‘নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের প্রথা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘জনগণ ৫ আগস্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশে ফ্যাসিবাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক বৈধতার জন্য এটা বিচারিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।’

অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,‘দেশে নির্বাচন হবে কি হবে না—এই প্রশ্ন করার পরিবেশ নেই। নির্বাচন হবেই।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সংস্কারের পথে হাঁটেনি, তাই সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা সংস্কারের পথে হেঁটে ঝামেলা বাড়িয়ে ফেলেছি।’

মান্না আরও বলেন, ‘৮৬টা সংস্কার যা সমাধান হয়েছে সেখানে পিআর নেই। সংস্কার কমিশনে পিআর নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেখানে নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে গণভোট। ভোট দুটা না তিনটা জোটে হবে তা নির্ধারণ হয়নি।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নাহিদ ইসলাম (এনসিপি আহ্বায়ক) যাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছে, তারা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের কী বোঝে, তাদের সন্তানরা? নাহিদ ইসলামরা ভুল ছিলেন।’

রাশেদ খান আরও বলেন, ‘কোন উপদেষ্টা জুলাইয়ের গাদ্দার—তাদের নাম প্রকাশ করুন। যে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন, সেই চুক্তি মানছে না। তারা কি নাহিদের কথা শুনছে না?’

রাশেদ খান বলেন, ‘সংস্কারের জন্য কি আমাদের আবার জীবন দিতে হবে? আগের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার সংস্কার করতে পারে নাই।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বলেন, ‘একই দিনে জাতীয় নির্বাচনের ভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ভোটে জামায়াত রাজি হয় নাই। ঐকমত্য কমিশনের ভেতরে ইতিবাচক থাকলেও বাইরে গিয়ে পরিবর্তন হয়েছে জামায়াতের।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিম্নকক্ষে পিআর দেশে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পিআর নিয়ে আন্দোলন ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিচ্ছে। বিভাজন নিয়ে নির্বাচনে গেলে তা বাঞ্চাল করে দেবে আওয়ামী লীগ ও ভারত।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন,‘নির্বাচন নিয়ে জোট ও তোড়জোড় চলছে। ইসলামী দলগুলো এক বাক্সে ভোট নিতে চায়। ইসলামী দলগুলোতে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। বামপন্থী দলগুলো জোট করার চেষ্টা করছে। মধ্যপন্থারাও চেষ্টা করছে জোট করার। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। অনিশ্চিতার দিকও আছে।’

মঞ্জু আরও বলেন, ‘ঝামেলা মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা নেই। আওয়ামী লীগ ও হিন্দু ভোটারদের নিয়ে টানাটানি চলছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবে, আর আওয়ামী লীগ লোকদের দলে ভেড়াবে।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান সতর্ক করে বলেন, ‘নির্বাচনী মিছিলে আওয়ামী লীগের লোক আছে—এই অভিযোগে মারামারি হবে। যা মোকাবিলায় চিন্তা করা উচিত।’ তার মতে, বিএনপি-জামায়াতের ভেতরেও বেশি মারামারি হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে আদৌই আর নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ০৬, ২০২৫)