রিপন মারমা, কাপ্তাই : রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে রাইখালীতে আশ্বিন মাসের প্রবারণা পূর্ণিমা তিথিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৌতম বুদ্ধকে ময়ুর আদলেই দৃষ্টিনন্দন রথে বসিয়ে বর্ণাঢ্য র‍্যালি নারানগিরি জাদী থেকে শুরু করে দুর্গম  হাপছড়ি এলাকায় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মাঝি পাড়া এসে শেষ হয়। এসময় রথটানা উৎসবে মেতে ওঠেন মারমা তরুণ-তরুণীরা।

মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় ‘রাথাঃ পোয়ে’। অনেকে আবার বলেন ‘সাংফোওয়া হ্নাং’। বাংলায় একে বলা যায় ‘শারদীয় উৎসব’।এই রথটানা উৎসবে হাজারো তরুণ-তরুণী নেচে–গেয়ে ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করেন এই রথটানা উৎসব। ‘ছংরাসি ওয়াগ্যোয়াই হ্লা, রাথাঃ পোয়ে লাগাইত মে’ (শরৎ ঋতু এসেছে, আশ্বিনে চলো রথটানা উৎসবে) গান গেয়ে রথ টানেন তরুণ-তরুণীরা।

৩২১ রাইখালী মৌজা হেডম্যান উসুয়েসুয়ে মারমা (মিশু) বলেন, রথে কাগজের বিহার বসানো হয়, কারুকাজ করতে হয় বুদ্ধমূর্তির আসনটিতে। এমনভাবে রথ তৈরি করা হয়, যাতে এর সামনে এলেই উপাসকদের ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও ভক্তি বোধ জাগ্রত হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন ও মঙ্গল কামনায় মোমবাতি প্রজ্বলনের বাতিঘরও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে স্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর রথে চাকা ও রশি সংযোজন এবং নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য বাঁশের ভেলা তৈরি করতে হয়। সুইসাইং মারমা বলেন, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে অশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ভিক্ষুরা ‘বর্ষাবাস’ পালন করেন। এ সময় ভিক্ষুরা জরুরি কোনো কাজ ছাড়া বৌদ্ধবিহারের বাইরে যান না। বর্ষাবাসের সমাপনী অনুষ্ঠানকে বলা হয় প্রবারণা উৎসব। মারমা ভাষায় একে বলে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা (ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে)। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এই পূর্ণিমা পালনের মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের পাপমোচন হয় বলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশ্বাস। এই দিনে বুদ্ধপূজা, সংঘদান, পিণ্ডদান, অষ্টপরিষ্কার দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, শীল গ্রহণ, প্রদীপ পূজা, ফানুস ওড়ানোর মতো নানা আচার পালন করা হয়।এটি ছিল এক অনন্য দিন- ভক্তি, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির মিলনমেলা। এসময় তিন পার্বত্য জেলা থেকে হাজার হাজার পূর্ণাথী সমাগম ঘটে। পরে এই দিনে ময়ুর আদলেই রথটিকে মধ্যরাতে জল দেবতার উদ্দেশ্যে রাতে কর্ণফুলী নদীর ঘাটে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

(আরএম/এএস/অক্টোবর ০৮, ২০২৫)