রাজবাড়ী প্রতিনিধি : দালালের খপ্পরে পরে জীবিকার সন্ধানে রাশিয়া গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম (৪৭) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরিবারকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন বলে নিউজ টোয়েন্টিফোর কে জানান নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার।

নিহত সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত থেকে ২০২০ সালে অবসরে যান। এর আগে ২০১৩ সালে তিনি কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১৮ মাস দায়িত্ব পালন করেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়, স্থানীয় দালাল ফরিদের পোলোভনে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতে রাশিয়ায় পাড়ি জমান নজরুল ইসলাম। তবে সেখানে গিয়ে বাধ্য হয়ে একমাসের প্রশিক্ষণ শেষে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেন। এর আগে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরের আসার পর সে বাঁধাই মালের ব্যবসা শুরু করেন।সেই ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েন।

নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী অবসরের পর বাড়িতে থাকতে না পেরে বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন। আমি বারবার নিষেধ করেছিলাম। বলেছিল, সন্তানদের নিয়ে আমরা একসাথে থাকব। কিন্তু সে বলল, রাশিয়ায় ভালো চাকরি দিয়েছে, নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করবে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ আমার সাথে কথা হয় ৩০ এপ্রিল। সেইদিন জানান—তিনি ব্যাংকে যাচ্ছেন টাকা পাঠাতে। কিছুক্ষণ পর ফের ফোন করে বলেন, টাকা পাঠানো হলো না, দ্রুত যেতে হচ্ছে। যদি ফোন বন্ধ পাই, ধরে নিও আমি আর বেঁচে নেই।সেটিই ছিল তার শেষ কথা। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সাত মাস ধরে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো তথ্য পাননি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে জানানো হয়, আমার স্ত্রী (নজরুল ইসলাম) মারা গেছেন।

নিহত নজরুল ইসলামের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম বলেন, ফরিদ নামের দালাল আমার ভাইকে প্রলুব্ধ করে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। আমরা বহু জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। ফরিদ সব সময় বলত ও বেঁচে আছে। নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছে না।এখন শুনলাম, ও আর বেঁচে নেই। সরকার যেন অন্তত লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।

অভিযুক্ত দালাল ফরিদের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নজরুল কে রাশিয়া পাঠাইনি। সে গেছে বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে। আমি শুধু যোগাযোগ করে দিয়েছি। সে সব জেনে-শুনেই গেছে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে। আমি নিজেও গত রাতে শুনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে নজরুল মারা গেছেন।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, নিহত নজরুল ইসলাম রেখে গেছেন চার কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, আর ছোট দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ৬ ও ৫ বছর।পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ পুরো পরিবার।

(একে/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২৫)