কাপ্তাইয়ে রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহার ও স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দান সম্পন্ন
.jpg)
রিপন মারমা, রাঙ্গামাটি : বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে ২নং রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি ঐতিহ্যবাহী রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহার ও ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের দেবতাছড়ি মহাজন পাড়া স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। চীবর দান অনুষ্ঠানে দুরদুরান্ত থেকে আগত দায়ক- দায়িকারা অংশ নিয়েছে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দিনব্যাপী পৃথক ভাবে দুটি স্থানে ২নং রাইখালী নারানগিরি রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহার ও ৫ নং ওয়াগ্গা দেবতাছড়ি মহাজনপাড়া স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহারে শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপন উপলক্ষে সকাল থেকে ফুলপুজা, বুদ্ধ পুজা, দেশ জাতি তথা সব প্রাণীর হিত সুখ মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও পঞ্চলশীল গ্রহণের পর বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার, কল্পতরু দান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ড দানসহ নানা বিধ দান এছাড়া সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন ও ফানুস উত্তোলন করা হয়।
রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উঃ পান্ডিতা মহাথের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজ নিকায় মার্গ রাজগুরু ভদন্ত উঃ জ্ঞানাওয়াইংসা মহাথের (ডাকবাংলা পাড়া)।প্রধান ধর্ম দেশনা প্রদান করেন,উঃ নাইংদা ওয়াসা মহাথের হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার বাঙ্গাল হালিয়া। এসময় গুরু ভান্তে স্মরণে সংঘ দান, প্রবজ্জ্যা গ্রহণ ও উপসম্পদা গ্রহণ করা হয়।
কঠিন চীবর দানোৎসবে আরও উপষ্ঠিত ছিলেন, রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি সভাপতি ক্যচিং মং মারমা, সাধারণ সম্পাদক থোয়াই সা প্রু (রুভেল) ও কোষাধ্যক্ষ আজাইমং মারমা (আজিম) অন্য দিকে ৫ নং ওয়াগ্গা অন্যতম দেবতাছড়ি মহাজন পাড়া স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহারেও কঠিন চীবর দান উদযাপন হচ্ছে।এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নোয়াপাড়া বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত পূঞাবংশ মহাথেরো এবং সভাপতিত্ব করেন মহাজন পাড়া স্বধর্ম জ্যোতি বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ক্ষেমিন্ডা মহাথেরো। অনুষ্ঠানে আশীর্বাদক হিসেবে ছিলেন, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ উঃ পামোক্ষা মহাথেরো এবং মঙ্গলাচরণ পাঠ করেন সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহার (আবাসিক) সুরেশ ভিক্ষু।
প্রধান ধর্ম দেশক ছিলেন, ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত সুমেধানন্দ মহাথেরো, বিশেষ স্বধর্ম দেশক ছিলেন, ওয়াগ্গা সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহারে ক্ষেমানন্দ ভিক্ষু। সংঘ বরণ করেন, সন্তোষ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা।
প্রধান দায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা এবং বিশেষ দায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মংহ্লাচিং মারমা।ধর্মীয় ভক্তিতে মুখর ছিল দুই এলাকা দুই স্থানে অনুষ্ঠিত এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে ভক্তবৃন্দের মাঝে ছিল গভীর শ্রদ্ধা, ভক্তি ও উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ আয়োজনে অংশ নেন শতাধিক ভিক্ষু ও অসংখ্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ। আয়োজকরা জানান, কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বোচ্চ দানের মধ্যে অন্যতম। এ দানের মাধ্যমে তারা সৎকর্মে অংশগ্রহণ ও ধর্মীয় পুণ্য অর্জনের সুযোগ পান।
৩২১ নং রাইখালী মৌজার হেডম্যান উসুয়ে সুয়ে চৌধুরী (মিশুক)জানান, নারানগিরি রায় সাহেব বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানটি এলাকার ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ। এই আয়োজনে যে শৃঙ্খলা, ঐক্য ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি আয়োজক কমিটি, দায়িক দায়িকা, পূর্ণ ও সকল ধর্মপ্রাণ ভক্তদের ধন্যবাদ জানাই। এই চীবর দান যেন সকল প্রাণীর মঙ্গল ও শান্তির বার্তা বয়ে আনে,এ কামনা করছি।
৫ নং ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আষাঢ়ি পূর্ণিমার পরদিন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী ওয়া বা বর্ষাব্রত পালন শুরু হয়েছিল, যা গত রবিবার শেষ হয়েছে। তিন মাস পর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে প্রবারণা পূর্ণিমা। বিহারে বিহারে শুরু হয়েছে কঠিন চীবর দানোৎসব। চলবে পুরো একমাস। ৬ নভেম্বরের তারিখ পর্যন্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনুষ্ঠানটিকে কঠিন চীবর দান বলার কারণ প্রথমে চরকার মাধ্যমে তুলা থেকে সুতা তৈরি করা হয়। ওই সুতায় রঙ করা হয়। পরে রঙ করা সুতা দিয়ে তৈরি করা হয় চীবর বা কাপড় এবং দান করা হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের। আর পুরো কাজটা শেষ করতে হয় একদিনের মধ্যে। সেই জন্যই এই কাপড় দান কঠিন চীবর দান নামে পরিচিত।
(আরএম/এএস/অক্টোবর ১১, ২০২৫)