গোপালগঞ্জ-ঢাকা রুটে যাত্রাবাহী ট্রেন চালুর প্রস্তাব

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকায় সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক বরাবর এ ব্যাপারে একটি অফিসিয়াল চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক, শিক্ষা,কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য সেবার দিক দিয়ে গোপালগঞ্জ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ইনমাস, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, নার্সিং কলেজ, ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সম্পৃক্ত রয়েছেন। এর অধিকাংশই গোপালগঞ্জ জেলার বাইরের মানুষ।
গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। দীর্ঘ ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার এই যাত্রা সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও দুর্ঘটনাপ্রবণ।
জেলা প্রশাসকের এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩ বছরে গোপালগঞ্জে ৩৩২টি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এতে ২৬৬ জনের প্রাণহানী ও ৪৯২ জন আহত হয়েছেন। তাই সড়ক পথ চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক তাঁর প্রস্তাবে লেখেন, “গোপালগঞ্জ জেলার বিপুলসংখ্যক ঢাকাগামী শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যাতায়াতের সুবিধা, ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা এবং সময় ও অর্থ সাশয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গোবরা স্টেশন থেকে ঢাকামুখী অন্তত দুটি সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করা জরুরি।”
গোপালগঞ্জ শহরতলীর গোবরা রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকালে একটি ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি রাতে আবার গোপালগঞ্জে ফিরে আসে। এই স্টেশনটি বাগেরহাটের মোল্লাহাট থেকে ৫ কিলোমিটার, নড়াইলের কালিয়া উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার এবং পিরোজপুরের উজিরপুর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোলগামী ট্রেনগুলো গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী রেল জংশন হয়ে যাতায়াত করে। তারপরও গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার যাত্রীরা রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জেলা প্রশাসকের এই প্রস্তাবের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এ চিঠি প্রেরণ করা হয়।
গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি আলহাজ্ব মো: মোশাররফ হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও নড়াইল জেলার হাজারো মানুষ নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দে ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। এটি শুধু সময় ও অর্থ সাশয় করবে না, বরং সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে মানুষের নিরাপদ যাত্রার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ অনেক কর্মকান্ডই ত্বরান্বিত হবে।
গোপালগঞ্জ শহরের রিকশা চালক মফিজ উদ্দিন, ইজিবাইক চালক ফরহাদ হোসেন, বড় বজারের দিন মজুর আ: রহমান, মুদি দোকানী আলম মিয়া, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসকের উদ্যোগটিকে আমরা স্বাগত জানাই। ঢাকা-গোপালগঞ্জ ট্রেন চালু হলে ভ্রমন হবে ধূলা-বালিবিহীন ও নিরাপদ। বাসে ৫শ’ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। ট্রেনে ভাড়া হবে অর্ধেক। শহরে মানুষের কোলাহল বড়বে। মন্দাভাব কেটে যাবে। এতে আমরা সবাই উপকৃত হব।
(বি/এসপি/অক্টোবর ১১, ২০২৫)