বিকল্প দেখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
‘দেশের ৬৫ শতাংশ জ্বালানিই এখন আমদানি-নির্ভর’

স্টাফ রিপোর্টার: ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেছেন, বাংলাদেশের প্রাথমিক জ্বালানির ৬৫ শতাংশই এখন আমদানি করতে হচ্ছে। তেল, কয়লা ও গ্যাস– সব ক্ষেত্রেই বাড়ছে বিদেশনির্ভরতা। স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে বিকল্প জ্বালানি উৎসের পথে হাঁটতে হবে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভ-এ পাঠ করা মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ম. তামিম বলেন, স্বল্পমেয়াদে এই ঘাটতি মোকাবিলায় এলপিজি হতে পারে কার্যকর সমাধান। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে টেকসই পথ।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ প্রতিবছর গড়ে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে কমেছে। বর্তমানে তা বছরে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ তেমন কার্যকর হয়নি। গ্যাস আমদানির অবকাঠামোও সীমিত। বর্তমানে দুটি এফএসআরইউ (ভাসমান গ্যাস টার্মিনাল) থেকে সর্বোচ্চ ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, নিজস্ব উৎস থেকেও গ্যাস সরবরাহ কমছে, আমদানিও সীমিত। ফলে বড় ধরনের জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের গ্যাস সরবরাহের বড় অংশই আসে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে, যা এখন প্রায় ‘লাইফের শেষ পর্যায়ে’।
অধ্যাপক তামিম বলেন, বর্তমানে দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, অথচ সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৫০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রতিদিনই প্রায় ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে বিকল্প জ্বালানি উৎস হিসেবে এলপিজি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রবন্ধে তিনি তুলে ধরেন, শিল্প, বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি খাতে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। শুধুমাত্র শিল্প খাতেই মোট এনার্জি ব্যবহারের প্রায় ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশই গ্যাসনির্ভর। এ অবস্থায় এলপিজি শিল্পখাত, পরিবহন, বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি ব্যবহারে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এলপিজি হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র জ্বালানি যা কোনো সময়ই সরকারিভাবে ভর্তুকি পায়নি। তবুও বাজার-চালিত এই খাত দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২২টি কোম্পানি এলপিজি সরবরাহ করছে, যার মধ্যে বসুন্ধরা, প্রিমিয়ার, যমুনা, ফ্রেশসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি বড় বাজার অংশীদার। বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন এলপিজি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সাত বছর আগের এক লাখ টনেরও কম থেকে বেড়ে এ পর্যায়ে এসেছে।
ড. ম. তামিম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ পাওয়ার ও শিল্প খাতে গ্যাসের বর্তমান ঘাটতির প্রায় ৩০ শতাংশই এলপিজি দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। বর্তমানে দেশে বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমমানের এলপিজি সরবরাহ সম্ভব।
অধ্যাপক তামিম বলেন, নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে। কিন্তু এলপিজি খাতে দ্রুত বিনিয়োগ ও নীতিগত সহায়তা দিলে এক বছরের মধ্যেই সরবরাহ সক্ষমতা দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১১, ২০২৫)