‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয়, ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি’

স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয়, বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা অনেক কমেছে। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
মূল্যায়ন ও ন্যায্যতা নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এসএসসি ফলাফল প্রকাশের পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ উঠেছিল, আমি তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছি। আমি সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি— যেন ভবিষ্যৎ পরীক্ষায়, বিশেষ করে এইচএসসি মূল্যায়নে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়, কিন্তু একইসঙ্গে যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়। আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয়, বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়। কারণ আজ যদি আমরা সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি তাহলে মেধাবীদের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি আমরা অন্যায় করব।
উপদেষ্টা বলেন, এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাসের হার ও জিপিএ–৫ এর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম এবং প্রশ্ন উঠেছে কেন? এর উত্তর জটিল নয়, বরং সহজ, কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকেই। প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল—পাসের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ–৫ এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড। ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি।
‘আজ আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টা হিসেবে আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক। যে ফলাফল শিক্ষার্থীর শেখাকে সত্যিকারের মূল্যায়ন করে, সেটিই হোক আমাদের সাফল্যের মানদণ্ড। ’
উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারি না। এই মন্ত্রণালয়ের কর্ণধার হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হলো নিজেকে ও আমাদের পুরো ব্যবস্থাকে মূল্যায়নের আওতায় আনা। এই ফলাফলকে আমি ব্যর্থতা নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে নিজেদের, শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রে শেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে সততার সঙ্গে কথা বলার সময় এসেছে।
স্ব-মূল্যায়ন ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি স্বতন্ত্র পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করছি—যারা ডেটা বিশ্লেষণ করে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবেন। আমাদের উদ্দেশ্য, অভিযোগ নয়, সমাধান খোঁজা।
মান নিয়ন্ত্রণ পর্যালোচনা ও র্যান্ডম অডিট নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা বোর্ডগুলোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যাচাই করার জন্য র্যান্ডম স্যাম্পল অডিট শুরু করছি। সীমান্তরেখায় থাকা স্ক্রিপ্টগুলো বেছে নিয়ে স্বাধীনভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এর উদ্দেশ্য— শাস্তি নয়, শেখা; কীভাবে মান উন্নত করা যায়, তা বোঝা।
পরীক্ষক প্রশিক্ষণ ও মডারেশন গাইডলাইন নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা মার্কিং রুব্রিক ও মডারেশন প্রটোকল পর্যালোচনা করছি, যেন ভবিষ্যতের পরীক্ষায় শিক্ষকরা আরও একীভূত মানদণ্ডে মূল্যায়ন করতে পারেন। এর জন্য রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালুর সম্ভাবনা বিবেচনাধীন।
(ওএস/এএস/অক্টোবর ১৬, ২০২৫)