বোয়ালমারীতে স্বামীর তালাকের চিঠি পেয়ে স্ত্রীর আত্মহত্যা

কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে স্বামীর পাঠানো তালাকের চিঠি হাতে পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক নব মুসলিম নারী। জানা গেছে, তিন বছর আগে স্ত্রী ও সন্তানকে ফেলে অন্য নারীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ওই স্বামী।
নিহত নারীর নাম সুমনা সুপ্তি (৩২)। তিনি বোয়ালমারী পৌরসভার উত্তর শিবপুর এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় পুষ্টি ক্লিনিকের সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছয় বছর বয়সী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করতেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রবিউল ইসলামকে বিয়ে করেন সুমনা সুপ্তি। সংসারে এক ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও, তিন বছর আগে রবিউল ইসলাম বাড়ি থেকে পালিয়ে অন্য এক নারীকে বিয়ে করেন। তারপর থেকে সুপ্তি তার ছেলে নিয়ে উত্তর শিবপুরে শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস করতেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ক্লিনিকে কর্মরত অবস্থায় ডাকযোগে তার স্বামীর পাঠানো তালাকনামা আসে। হাতে চিঠি পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এরপরে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে রাতে নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
নিহতের সহকর্মী পুতুল সরকার বলেন, “সুপ্তি খুবই ভালো মেয়ে ছিল। আমাদের ক্লিনিকের সেরা নার্স ছিল সে। কিন্তু স্বামীর তালাকের কাগজ পেয়ে ভেঙে পড়ে। হয়তো সেই কষ্টেই সে আত্মহত্যা করেছে। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।”
নিহতের ভাসুর আজম শেখ বলেন, “আমার ভাই রবিউল ১৫ বছর আগে হিন্দু মেয়েকে মুসলিম করে বিয়ে করে। পরে অন্য নারীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেই। ছোট ভাইয়ের বউ সুপ্তি তার ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকত। গতকাল শুনলাম রবিউল তালাকনামা পাঠিয়েছে। এর পরই সে আত্মহত্যা করে।”
বোয়ালমারী সরকারি কলেজ রোডের পুষ্টি ক্লিনিকের মালিক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “মাত্র তেরো বছর বয়সে সুমনা আমার ক্লিনিকে কাজ শুরু করে। সেই সঙ্গে পড়ালেখাও চালিয়েছে। এখন সে ছিল আমাদের সিনিয়র নার্স। প্রায় ১৭ বছর ধরে চাকরি করেছে। তার মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক।”
নিহতের স্বামী রবিউল শেখের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান বলেন, “লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। মরদেহ ফরিদপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
(কেএফ/এসপি/অক্টোবর ১৬, ২০২৫)