রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গত বছরের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চিংড়িখালিতে পাঁচটি ভূমিহীন পরিবারের ডিসিআরকৃত ২০ বিঘা মাছের ঘের লুটপাট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর শেষে জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুইজন আদালতে মামলা দায়েরের পাশাপাশি একজন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছেন। অন্য দুইজন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওইসব মামলা ও অভিযোগে ইন্দ্রনগর গ্রামের নবাব আলী সরদারের ছেলে বর্তমানে চিংড়িখালির ভূমিহীন নেতা শহীদুল ইসলামসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। 

গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভূমিহীন জনপদের ত্রাস স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আরিজুল ইসলামের ছত্রছায়ায় থাকা চিংড়িখালির শহীদুল ইসলাম, তার ভাই রবিউল ইসলাম বুল্লা, মহাতাব আরিজুল ইসলাম, মধু সরদার, রফিকুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান আনারসহ ১৫/১৬ জন তার চিংড়িখালির বাড়িতে ঢুকে স্ত্রী খুকুমনি খাতুন (৩৫) ও ছেলে জুবায়েরকে (১৮) মারটিপ করে তাড়িয়ে দেয়। পরে তার বাহিরের চরের ভিতরের আট বিঘার জমির চার লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটপাট করে। পরে ওই জমি জবরদখলে নেয়। এ ঘটনায় তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেলেও জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় বলে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টি ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২০১৪ সালের ১০ মে উপপরিদর্শক শহীদুল্লার দায়েরকৃত জিআর -১০০/১৪ নং মামলা ,অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তারের ঘটনায় র‌্যাব -৬ এর ডিএডি লুৎফর রহমানের ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত বিশেষ ক্ষমতা আইনে (জিআর-১৭৭/১৮ কালিঃ), ২০০৭ সালের পহেলা জুন বৈরাগীর চকের কবীর সানা হত্যার ঘটনায় (জিআর-৬৩/২০০৭,কালিঃ), ২০২৪ সালের পহেলা নভেম্বর দেবহাটার খলিশাখালির ভূমিহীন নেতা কামরুল গাজীকে হত্যার ঘটনায় (জিআর-৯৪/২৪ দেবঃ), চিংড়িখালির আব্দুস সাত্তারের দায়েরকৃত কালিগঞ্জ থানার জিআর-৭০/২০ নং চাঁদাবাজির, মাঘুরালির শেখ আব্দুস সাত্তারের দায়েরকৃত ১৮/২২ নং চাঁদাবাজি, ইন্দ্রনগরের আবুল হোসেনের দায়েরকৃত (জিআর-২৪৭/২২ কালিঃ) হত্যা চেষ্টা মামলা, খুলনার ডুমুরিয়ার আবিদুর রহমানের দায়েরকৃত বিষ্ফোরক দ্রব্য ও চাঁদাবাজির ধারায় (জিআর-২৫৫/১৪ কালিঃ) মামলাসহ কালিগঞ্জ থানার জিআর-১২২/২১ নং, জিআর-২১৫/০৯, জিআর-৬৫/১৭, ৩০৩ /১৪, ৫৮৭/২৫, সাতক্ষীরা সদরের ৩০/১৪নং মামলাসহ দ্ইু ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। প্রায় সমসংখ্যাক মামলা আছে তার ভাই রবিউল ইসলাম বুল্লাসহ অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

চিংড়িখালির আলেক গাজীর ছেলে অজিয়ার রহমান জানান, শহীদুল ও তার সহযোগীরা তার ডিসিআরকৃত এক একর জমির লক্ষাধিক টাকার মাছ গত ১৫ সেপ্টেম্বর লুটপাট করে দখল নেওয়ার ঘটনায় তিনি সাতক্ষীরার আমলী আদালত-২ এ (সিআর-৫৮৩/২৫) মামলা করলে আদালত কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে চিংড়িখালির আব্দুস সাত্তার গত ১৩ সেপ্টেম্বর ডিসিআরকৃত এক একজর জমির ৭০ হাজার টাকার মাছ, তিন ইঞ্চি মোটর ও একটি ইঞ্জিনচালিত মোটর ভ্যান লুট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শহীদুলসহ তার ১০ সহযোগীর বিরুদ্ধে সিআর-৫৮৩/২৫ নং মামলা করেছেন। বিচারক কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

চিংড়িখালির ওয়াজেদ আলী মোল্লার ছেলে ফজলুর রহমান জানান, গত বছরের ২৬ সেপ্টম্বর শহীদুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা তার এক একর ও ছেলে ছিদ্দিকের এক একর ডিসিআরকৃত জমির ঘেরের মাছ লুটপাট ও বাসা ভাংচুর শেষে দখল করে নিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি মামলা করে প্রতিকার পাবেন না বলে মনে করায় মামলার করেননি।

তবে শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় দলবাজির কারণে তার বিরুদ্বে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়েছে। একটি বাদে সব কটিতে তিনি জামিনে রয়েছেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০২৫)