আশজাদ রসুল সিরাজী, গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরীর শিমুলতলী এলাকায় ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার আড়ালে প্রতিরাতে চলছে জুয়ার আসর, লটারির নামে প্রতারণা। এই অবৈধ মেলা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ঢাকা-গাজীপুর-শিমুলতলী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী ও মুসুল্লিরা। প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রশাসনকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে সতর্ক করে—এ সময়ের মধ্যে মেলা বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় তারা।

আজ শনিবার সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিএমটিএফ লিমিটেড আর্মি ফার্মা ফ্যাক্টরির নির্ধারিত স্থানে “ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলাচ্ আয়োজনের নামে ‘বেনারশী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট-এর মালিক বাদল মিয়া গত ২৭ আগস্ট থেকে অবৈধভাবে এই মেলা চালু করেন। আয়োজকরা গাজীপুর জেলা প্রশাসন বা মহানগর পুলিশের কোনো অনুমতিই নেননি। অথচ প্রতিদিনই সেখানে চলছে লটারির নামে জুয়া ও প্রতারণার রমরমা ব্যবসা।

অভিযোগ রয়েছে, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দুই শতাধিক বিক্রয় কর্মী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে লটারির টিকিট বিক্রি করে প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করছে। পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকারের লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে তারা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। ড্রতে নাম ওঠে কেবল আয়োজকদের ‘নিজেদের লোকজনের। প্রকৃত ক্রেতারা কিছুই পাচ্ছেন না—বরং প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো।

স্থানীয়দের দাবি, জুয়ার পাশাপাশি মেলায় চলছে অশ্লীল নাচগান, যা এলাকায় অশান্তি ও যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ডেকে এনেছে। এমনকি গত ৩০ সেপ্টেম্বর মেলার নাগরদোলায় দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হন।

ডুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মেলার বিরোধিতা করে গত ২১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। তাতে যানজট, শব্দ দূষণ ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে মেলা বন্ধের দাবি জানানো হয়। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা।

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুন বলেন, এই মেলার জন্য কোনো আবেদন বা অনুমতি জেলা প্রশাসনের কাছে আসেনি, তাই অনুমোদনের প্রশ্নই ওঠে না। তবে তারা মেলা করবে এমন একটি চিঠি দিয়েছে মাত্র আমরা তাদের কোন ধরনের অনুমতি দেইনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান জানান, “মেলার অনুমতির জন্য কেউ আবেদন করেনি। তাই পুলিশও কোনো অনুমতি দেয়নি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নিকট থেকে তারা মেলা পরিচালনা করার কোন অনুমতি পায়নি।

অন্যদিকে, আয়োজক মাহমুদ দাবি করেন, সেনাবাহিনী অনুমতি দিয়েছে—কিন্তু গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর গিফারী বলেন, “আমাদের কেবল জানানো হয়েছিল, কিন্তু কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন—যেখানে প্রশাসন, পুলিশ ও ক্যান্টনমেন্ট কেউ অনুমতি দেয়নি, সেখানে এতবড় অবৈধ মেলা কীভাবে দিব্যি চলছে? এখন সকলের চোখ প্রশাসনের দিকে—তিন দিনের আলটিমেটাম শেষে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেটিই দেখার বিষয়।

(এস/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০২৫)