শ্যামনগরে জমি দখল করতে গিয়ে বাড়িতে আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা
.jpg)
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মীরগাং গ্রামে বন্দোবস্তকৃত দলিলের জমি দখল করতে যেয়ে বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে শ্যামনগর উপজেলার মীরগাং গ্রামের সুবোধ গাইনের ছেলে দীলিপ গাইন বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- মীরগাং গ্রামের দেবেন ভাংগীর ছেলে জঙ্গল ভাংগী, দূঃখে ভাংগীর ছেলে সাগর ভাংগী, পরেশ মণ্ডলের ছেলে নিত্যানন্দ মণ্ডল ও তার ছেলে গোপাল মণ্ডল।
মামলার বিবরণে জানা যায় মামা কালিপদ মণ্ডলের খাস হয়ে যাওয়া ১৪ বিঘা জমির মধ্যে এক একর ৭৮ শতক জমিতে দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ঘরবাড়ি বেঁধে ভোগদখলে ছিলেন মীরগাং গ্রামের দীলিপ গাইন ও তার ভাইয়েরা। সম্প্রতি তারা আটজন ওই জমি ডিসিআর নিয়েছেন। সম্প্রতি ওই জমির মধ্যে কিছু অংশ ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে পঁচি ভাংগী, মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বন্দোবস্ত নিয়েছেন দাবি করে দখল করার চেষ্টা করে আসছিল। লক্ষীরানী মণ্ডলের বাবা বিহারী মণ্ডলের সমাধি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে জমির সীমানা বেড়া ভেঙে ২০১১ সালে ১৯ শতাংশ জমি জবরদখল করেন ফাতেমা ও মিজানুর রহমান। ভাঙচুরেও জবরদখলে বাধা দেওয়ায় তিনি (দীলিপ)সহ ভাই তপন গাইন, কমলেশ গাইন ও তুষারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় পঁচি ভাংগীর ছেলে তপন গাইনের ২০ শতক রেকডীয় জমি নিয়ে মীমাংসা করে নেয়। এরপরও সম্প্রতি জঙ্গল ভাংগী ও তার ভাইপো সাগর ভাংগী স্থানীয় এক বনদস্যু বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় তাদের জমি জবরদখলের চেষ্টা করে আসছিল।
বিষয়টি নিয়ে ২০২৩ সালের শেষের দিকে শালিসী বৈঠক হয়। জমি মাপ জরিপ করা হলে পঁচি ভাঙ্গীর জমি পূর্ব পশ্চিমে লম্বা বেড়িবাঁধের নীচে পাঁচ ফুট করে লম্বা জায়গা চিহ্নিত করেন সার্ভেয়র অমল কুমার ঘোষ। শুক্রবার বিকেলে এ নিয়ে আবারো শালিসি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত না মেনে বন্দোবস্ত দলিলের জমি উদ্ধারের নামে শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে তাদের (দীলিপ) ডিসিআরকৃত ৫০ শতক জমি ও পুকুর নেট দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। লুটপাট করা হয় পুকুরের মাছ। স্থানীয়রা ৯৯৯ এ খবর দিলে পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে আত্মগোপনে যায়। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তারা দীলিপ গাইনের বসতবাড়ি, রান্না ঘর ও কাঠের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ৫০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। লুটপাট করা হয় ৩০ হাজার টাকারও বেশি মালামাল। খবর পেয়ে শনিবার ভোর চারটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা জানান, এ ঘটনায় দীলিপ গাইন বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬ জনের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
তবে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাস্থলে যেয়ে ঘটনার সত্যতা না পেলে আসামিদের গ্রেপ্তার করবেন না। তবে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিসের ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিভাবে মামলা রেকর্ড হলো সেটা ওসি সাহেবের ব্যাপার। পরবর্তী দায়িত্ব তদন্তকারি কর্মকর্তার।
(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১৯, ২০২৫)