ফরিদপুরে হাবিব চৌধুরীর নামে এক নারীর থানায় অভিযোগ, ভিত্তি নেই বললেন হাবিব

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের মৃগী গ্রামে হাবিব চৌধুরী (৬৭) ও তার ছোটভাই রতন চৌধুরীর নামে ওই গ্রামের প্রতিবেশী ও গ্রাম সম্পর্কে ফুফাতো বোন জাহানারা ইয়াসমিন (৬৫) নামে এক নারী কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি এর কয়েকদিব আগে ওই একই অভিযোগ ফরিদপুরের পুলিশ সুপার বরাবরও করেছেন বলে জানা গেছে। তবে, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই, ইহা ডাহা মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে মন্তব্য করেছেন বিবাদী হাবিব চৌধুরী ও রতন চৌধুরী। তাদের সামাজিকভাবে হেয় করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে জানান তারা।
আজ সোমবার সকালে জাহানারা ইয়াসমিনের গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় করা অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও কোতয়ালী থানায় একই প্রকার লিখিত অভিযোগে ওই নারী এই মর্মে অভিযোগ করেন যে, ১. হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে হবি চৌধুরী (৬৭) ও ২. রতন চৌধুরী উভয় পিতা সমীর উদ্দিন চৌধুরী। বিবাদীগণ আমার গ্রামের সম্পর্কে মামাতো ভাই। আমি দীর্ঘদিন যাবত এলাকার বাইরে অবস্থান করেছিলাম। বিগত ২০১২ সালে দিকে আমি আবার পুনরায় দেশে ফিরে আসি। এলাকায় ফিরে আমি আরবি বাংলা ইংরেজি ইত্যাদি টিউশনি শুরু করি। বিভিন্ন বয়সের মহিলা এবং বাচ্চারা এসে আবার কাছে আরবি শিখতে আসতো। এদেরই সুবাদে আমার কিছু ডাকনাম হয়ে পড়ে। এরই সত্য তার জের ধরে আমাকে তারা শারীরিক নির্যাতন করে। ২ নং বিবাদী আমাকে মাঝে মাঝে ওই পাথর করতো। ২০১২ সালের স্নান করতেছিলাম। বাসায় অবস্থান করা কালীন সময়ে সামি আলহাজ হাবিবুর রহমান চৌধুরী আমার বাসায় আসে। আমাকে জিজ্ঞেস করে যে যেদিন ঘুমিয়ে আছো কেন? আসামি আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান চৌধুরী আমার বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং আমার ঘুমানোর খাটের সামনে এসে আমার হাত ধরে। আমি কিছু বোঝার আগেই আমার খাটের উপর উঠে আমাকে শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করে। আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে ঈদের নামাজের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে মাটিতে ফেলে কিল ঘুসি লাথি মারতে থাকে। আসামিদের ভয়ে আমি কোন উপায়ান্তর না পেয়ে গলায় ফাঁস দিতে গিয়েছিলাম।
পাশের বাসার আত্মীয় স্বজনের আমাকে উদ্ধার করে এবং আমাকে সাহস দেয় এবং আমাকে বলে যে আপনি কেন এ কাজ করবেন? আপনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আসামিদের ভয়ে আমি কখনোই ঘর থেকে বাহির হতে পারতাম না। তাহারা আমাকে হুমকি প্রদান করে যে, থানায় অভিযোগ বা কোন আইনের আশ্রয় নিলে তোকে জীবনে মেরে ফেলবো। আমি তাদের ভয়ে কিছুই করতে পারতাম না। আসামিগণেরা আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন এবং এতটাই ভয়ঙ্কর ছিলেন যে এলাকার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহস পেতো না। দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত আমি স্বামী হারা পিতা-মাতা ছাড়া। আমার আপন বলতে কেউ নাই। আমি বর্তমানে এখন নিয়ত করছি যে আমি একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করবো সেখানে ছেলেমেয়েরা আরবি শিক্ষা গ্রহণ করবে। এখন বিবাদীগণ ওই প্রতিষ্ঠানটি আমাকে গড়তে দিবে না। আমার মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠার জমি জোরপূর্বক সিনিয়র নিতে চাচ্ছে। তারা আমাকে এখনও হুমকি ধামকি প্রদান করিয়া আসছে। আমি কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে এবং নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে আপনার শরণাপন্ন হইলাম। উপরোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বিচার দাবি করেন।
এদিকে, জাহানারার করা অভিযোগের বিষয়টি অবগত করলে সদহর দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়ভাই ও চৌধুরী পরিবারের বর্তমান অভিভাবক মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে হবি চৌধুরী এ বিষয়ে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, ও (জাহানারা) একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলা , যার কারণে নিজের স্বামীর ঘর পর্যন্ত সে করতে পারে নাই, সন্তান ও নিজের ভাই পর্যন্ত ওর খোঁজ রাখেনা। মৃগী গ্রামে সমাজচ্যুত যে কয়েকটি পরিবার রয়েছে, তার মধ্যে জাহানারা অন্যতম। ওর সাথে কেউ মিশেও না, কথাও বলে না।'
জাহানারা ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে হাবিব চৌধুরী জানান, 'এসব ডাহা মিথ্যা। ও এটা গল্প হিসেবে বানিয়েছে। সে একবার বলে বিশ/বাইশ বছর আগে ধর্ষিত হয়েছিলো, আবার বলে ১০/১২ বছর আগে। ওর কথার কোনো ঠিক আছে? আমি ধর্ষণ করে থাকলে ওমন গুরুতর অভিযোগ এতো বছর পরে এসে কেউ করতো? এগুলো আমার সম্মান নষ্টের পায়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব কেউ তাকে উস্কানি দিয়ে করাচ্ছে, সমাজে আমাকে হেয় করার জন্য, আমার চরিত্র হননের জন্য।’
এছাড়া জাহানারা ইয়াসমিনের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে হাবিব চৌধুরী জানান, 'আমার জমি'র অভাব পড়েনি যে, আমি ওর জমি জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করে যাবো? সে তাঁর জমি আমার কাছে বিক্রি করতে চাইতেও তো আমি ওই জমি কিনবো না। তাছাড়া, আমার নামে যেসব অভিযোগ জাহানারা ইয়াসমিন করেছে সেসব অভিযোগের বাস্তবিক অর্থে কোনো ভিত্তি নেই। এসব ডাহা মিথ্যা, মানহানীকর ও অপবাদ ছড়ানোর অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।'
জাহানারা ইয়াসমিনকে সমাজচ্যুত করার বিষয়ে হাবিব চৌধুরী জানান, 'তার খারাপ ব্যবহার, হীন মানসিকতা ও অনবরত সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা থেকে রেহাই পেতেই তাকে এলাজার মানুষ তাকে সমাজচ্যুত করেছে। এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়, আমাদের সমাজের সবার সিদ্ধান্ত।'
সমাজে চলাচলের ক্ষেত্রে সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখাটা জরুরি, যা ওই মহিলার মধ্যে নাই তাই সে সমাজচ্যুত জানিনে হাবিব চৌধুরী আরও বলেন, 'সে (জাহানারা ইয়াসমিন) যদি নিজেকে সুধরিয়ে ভালো হয়ে আসে, ভালোভাবে চলাচলের প্রতিশ্রুতি দেয়, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে সমাজে মিশতে চায়, তবে শুধু সে নয় তার সাথে আমাদের গ্রামের সমাজচ্যুত যে কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিবার রয়েছে, একই শর্তে তাঁদের সবাইকেই সেই সুযোগ দেওয়া হবে। সমাজে তাদের যথাযত সম্মান সমুন্নত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরেজমিনে পুলিশ সুপারের বরাবর করা জাহানারা ইয়াসমিনের অভিযোগের বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা নিতে, মৃগী গ্রামের জনৈক হয়রত আলীর মুদি দোকান থেকে মৃগী বাজার বাসস্ট্যান্ড (ছোট আঙিনা) পর্যন্ত বেশকিছু সাধারণ শ্রেনীর স্থানীয় জনসাধারণের সাথে কথা বললে, উভয় পক্ষের বিষয়ে জনতার মুখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। তবে, অনেকেই হাবিব চৌধুরী ও তার পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতিকে হাবিব চৌধুরির পরিশ্রমের ফসল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এসব বিষয়ে এতো আলোচনা সমালোচনার পর ওই গ্রামের প্রায় সবাই একটি বিষয়ে এটলিস্ট একমত হয়েছেন, আর তা হচ্ছে- ফরিদপুর পৌরসভা ও কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সীমান্তবর্তী এলাকা বা বর্ডার এরিয়ায় অবস্থিত ওই গ্রামটি- শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করে বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠুক। সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে গ্রামটিতে বয়ে যাক শান্তি, স্বস্তি ও পারস্পরিক সম্প্রতির সুবাতাস। যেখানে সকল অন্ধকার ভেদ করে একগুচ্ছ নির্ভেজাল আলোরশ্মি ফুটে উঠুক, যার নির্মল আলোয় বেড়ে উঠুক একটি সুস্থ, সুন্দর, মেধাবি গর্বিত প্রজন্ম।
(আরআর/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০২৫)