গোপালগঞ্জে দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
.jpeg)
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অকেজো ভবন নিলামের দরপত্র (শিডিউল) ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে দরপত্র জমা দিতে না পারা বিক্ষুব্ধরা বিক্ষোভ করেছে। সিন্ডিকেট করে নির্দিষ্ট কয়েকটি দরপত্র জমা দিয়ে বাকি দরপত্র আটকে রাখা হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধরা জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, তারাকান্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশুতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ল, জামিলা সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়, সোনাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ টি পুরাতন ভবন ও পুরাতন ভবনের পরিত্যক্ত মালামাল নিলাম দেওয়ার জন্য গত ৭ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত। এ উপলক্ষে ১২ ও ১৩ অক্টোবর প্রতিটি ভবনের জন্য আলাদা আলাদা নিলাম মূল্য নির্ধারণ করে অফেরযোগ্য ১ হাজার টাকার বিনিময়ে নিলাম শিডিউল বিক্রি করা হয়।
প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য ৩০ হাজার টাকার পে-অর্ডার সহ রেববার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত দরপত্র জমা নেওয়া হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে।
রবিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে টেন্ডার বাক্স ওপেন করেন নিলাম কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত।
ওই দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, জামিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে দরপত্র শিডিউল বিক্রি হয় ১শ’ ১টি। অন্যদিকে বাক্সে জমা পড়ে দরপত্র ৫টি। এর মধ্যে ২টি দরপত্রে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। সোনাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০১টি বিক্রিত শিডিউল দরপত্রের মধ্যে জমা পড়ে ৬ টি দরপত্র। এর মধ্যে ১টি দরপত্রে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। আশুতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লয়ের ৯৬টি বিক্রিত শিডিউল দরপত্রের মধ্যে জমা পড়ে ৫ টি দরপত্র। এর মধ্যে ১টি দরপত্রে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। ৩৩ নং তারাকান্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯১টি বিক্রিত শিডিউল দরপত্রের মধ্যে জমা পড়ে ২টি দরপত্র। এরমধ্যে ১টি দরপত্রে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। অন্য দরপত্রে শিডিউল মূল্যের চেয়ে দর কম থাকায় তারাকান্দ সরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিলাম বাতিল করা হয়। অন্য ৩টি বিদ্যালয়ে সর্ব্বোচ দরদাতাকে নিলাম প্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপরই উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন দরপত্র নিলাম বাক্সে জমা না পারা ব্যক্তিরা।
সাবেক ইউপি সদস্য সবুর শেখ বলেন, বিএনপি নেতা মিঠু, নান্নু ও অনামিকা ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি নিয়ে আমাদের দরপত্র ছিনিয়ে নেয়। আমরা এই নিলাম বাতিলের দাবি জানাই। নিলাম বাতিল করা না হলে আমরা ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেব।
কোটালীপাড়া উপজেলা নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমন্বয়ক নাজমুল দাড়িয়া বলেন, আমি দরপত্র জমা দিতে গেলে আমার হাত থেকে দরপত্র জমা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় বিএনপি নেতা মিঠু। পরে যখন বাক্স ওপেন করা হয় তখন বাক্সের ভিতর আমার দরপত্র না দেখে আমি অবাক হই। কিছু ব্যক্তি এ নিলামকে সিন্ডিকেট করেছে। বিকেলে আমাদের কিছু দরপত্র একটি কালো ব্যাগে ভরে তারা উপজেলা পরিষদের নিচে ফেলে রেখে যায়। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অনতিবিলম্বে এই নিলাম বাতিল করে, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
অভিযুক্ত কোটালীপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাওলাদার মিঠুর মোবাইলে একাধিক ফোন দিলে রং হলোও তিনি ফোন ধরেন নি। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেল শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, নিলাম আহ্বান ও নিলাম কার্যক্রম বিধি মোতাবেক পরিচালনা করা হয়েছে। তবে বাইরে থেকে কেউ কোন অনিয়ম করছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, নিলাম সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। তবে কেউ দরপত্র জমা দিতে পারে নাই বলে কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
(টিবি/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০২৫)