ফরিদপুরে কিশোর হামজা হত্যার রহস্য উন্মোচন
রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র মো. আমির হামজা (১৩) হত্যার দায়ে আরেক মাদরাসাছাত্রকে (১৬) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রের ব্যবহৃত একটি কাঁথার সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ। হামজা থেকে হাওলাত নেওয়া ৫০ টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে 'দৈনিক বাংলা ৭১'কে নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের মধুখালী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আজম খান।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) হামজা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত কিশোরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
নিহত মাদরাসা শিক্ষার্থী আমির হামজা (১৩) আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের সায়েমউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। সে গোপালপুর ইউনিয়নের চান্দড়া নুরানি তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার জামাতখানা বিভাগের দ্বিতীয় জামাতের ছাত্র ছিল। গ্রেফতারকৃত কিশোরও (১৬) একই মাদ্রাসার ছাত্র।
এ বিষয়ে সহকারি পুলিশ সুপার মো. আজম খান বলেন, ওই কিশোর প্রায়ই আমির হামজার কাছ থেকে টাকা ধার নিতো। সর্বশেষ ৫০ টাকা ধার নেওয়ার পর অনেক দিন ধরে তা ফেরত দেয়নি।
এদিকে আমির হামজা বারবার টাকা ফেরত চাইতে থাকে। এতে অভিযুক্ত কিশোর বিরক্ত হয়ে রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে হামজাকে বলে- সে বাড়ি থেকে টাকা এনে দেবে। এরপর একটি সাইকেলে করে আমির হামজাকে সঙ্গে নিয়ে যায়।
এএসপি আজম খান বলেন, ওই মাদরাসার পাশে একটি বাগান আছে। সেই বাগান থেকে ওই কিশোরের বাড়ি প্রায় ৫শ গজ দূরে। ওই বাগানে টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হামজার গলাটিপে ধরে রাখে ওই কিশোর। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হামজা।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর সন্ধ্যা হয়ে গেলে ওই কিশোর মরদেহ বাগানে ফেলে রেখে মাদরাসায় ফিরে আসে। সন্ধ্যার ক্লাসে হাজিরা দিয়ে মাদরাসা থেকে তার ব্যবহৃত একটি কাঁথা নিয়ে আবার বাগানে ফিরে যায় সে। এরপর নিজের বাড়ি থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা এনে হামজার মরদেহ বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে সঙ্গে পাঁচটি ইট ভরে বাগানের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর ওই পুকুরে বস্তাটি ভেসে ওঠে। পরে পুলিশ গিয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
এএসপি আজম খান বলেন, এটি একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড ছিল। এ হত্যা রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ চারটি আলাদা টিম গঠন করে।
তদন্তে জানা যায়, আমির হামজা বিকালে কারও সঙ্গে সাইকেলে উঠেছিল। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা কাঁথা ও ওই মাদ্রাসার কিশোরের ব্যবহৃত কাঁথা মিলে গেলে হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তবে এ হত্যার পেছনে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল আলম উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, 'এ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা সায়েম উদ্দিন বিশ্বাস বাদি হয়ে বুধবার আলফাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় বুধবার আটককৃত ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।'
(আরআর/এএস/অক্টোবর ২৪, ২০২৫)
