বারংবার কাশি দিয়ে ধরা পড়লেন চাকরিপ্রার্থী
শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে উপ-খাদ্য পরিদর্শক নিয়োগ পরীক্ষা হলে বারংবার কাশি দিয়ে ধরা পড়লেন চাকরিপ্রার্থী।কাশির বিষয়টি বিরক্তিকর লাগায় সেই পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তল্লাশি করতে গিয়ে উদ্ধার হলো বারবার কাশির কারণ কী। ওই পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে উদ্ধার হয় দু'টি ডিভাইস। পরে তাকে আটক করেছে পুলিশ। পরে এঘটনায় আটক করা হয় আরো দু'জন।
আজ শনিবার সকালে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরপরই দিনাজপুর শহরের কসবা এলাকায় কেরী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। অন্যান্য কেন্দ্রের মতো এই কেন্দ্রেও খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা চলছিল।
আটক পরীক্ষার্থীর নাম কৃষ্ণকান্ত রায়। তিনি বিরল উপজেলার সিঙ্গুল পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা।
স্নাতক সম্পন্ন করা এই চাকরিপ্রার্থী ভাড়া থাকতেন দিনাজপুর শহরের ফকিরপাড়া এলাকায় একটি ছাত্রাবাসে। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে কৃষ্ণকান্ত রায় চাকরির পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা। সে জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ঢাকার একটি চক্র জড়িত রয়েছে। তাদের মাধ্যমে এসব ডিভাইস পেয়েছেন এবং তা নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন। যোগাযোগ ডিভাইসের অন্য প্রান্ত থেকে তাকে বলা হয়েছিল, প্রশ্নের সেট ‘পদ্মা’ হলে যেন কাশি দেন।প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত ঢাকার একটি চক্রের মাধ্যমে এসব ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন। যোগাযোগ ডিভাইসের অন্য প্রান্ত থেকে তাকে বলা হয়েছিল, প্রশ্নের সেট ‘পদ্মা’ হলে যেন কাশি দেন। বিষয়টি বুঝতে না পেরে বারংবার কাশি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। বিষয়টি বুঝে উঠতে না পেরে বারবার কাশি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি।
জালিয়াতির প্রক্রিয়া বর্ণনা করে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা শুরুর এক থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চক্রটির হাতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রটি চলে আসে। শহরের ফকিরপাড়া ও সুইহারি এলাকায় দু'টি ছাত্রাবাসে কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষক বিভিন্ন সেটের প্রশ্নগুলোর উত্তরপত্র প্রস্তুত করেন। এর মধ্যে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নের সেট নম্বর জেনে নেয় চক্রটি। পরে ক্রম অনুযায়ী, প্রশ্নগুলোর উত্তর (ক, খ, গ, ঘ) বলতে থাকে।
পরীক্ষার্থী শুনে শুনে তৎক্ষণাৎ প্রশ্নপত্রে বিশেষ দাগ দিয়ে উত্তরগুলো চিহ্নিত করেন। পরে ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করেন।
আটকের পর তার কাছ থেকে দুটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাকৃতির গোল ডিভাইসটি তাঁর কানের ভেতর বিশেষ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। অন্যটি সাঁটানো ছিল স্যান্ডো গেঞ্জির সঙ্গে। পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে তাকে তাৎক্ষণিক আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল, ওই কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থী ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু সেটি কোন কক্ষে এবং কোন পরীক্ষার্থী সেটি অস্পষ্ট ছিল। আমরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছিলাম। পরে ১০১ নম্বর রুমের ওই শিক্ষার্থীর আচরণ সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে আমরা তাকে তল্লাশি করে ডিভাইসগুলো উদ্ধার করা হয়।’
শনিবার দিনাজপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে কমপক্ষে ৫৫ জন ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন বলে প্রশাসনের কাছে তথ্য ছিলো আগে থেকেই।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান জানান, 'জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এক পরীক্ষার্থীকে আমরা হাতেনাতে ধরেছি। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে থেকে তার ভাই ও আরেক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। পুরো চক্রটি ধরতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চলমান রয়েছে।’
(এসএস/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০২৫)
