যশোর প্রতিনিধি : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের উপস্থিতিতে আজ রবিবার যশোরে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ঘুষ ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে যশোর জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোকান বরাদ্দের নামে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগের জবাবে আলমগীর হোসেন দাবি করেন, তিনি "ঘুষ খাননি; দাওয়াত খেয়েছেন, আর পাকা কলা খেয়েছেন।"

যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে দুদকের এই গণশুনানি চলে একটানা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এতে শুধু জেলা পরিষদ নয়, যশোরের ৩৭টি সরকারি-আধা সরকারি দপ্তরের মোট ৭৫টি অভিযোগের শুনানি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এসময় জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেনকে (যিনি ঘুষের বদলে 'দাওয়াত ও পাকা কলা' খাওয়ার দাবি করেন) সাময়িক বরখাস্ত করে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ।

বিআরটিএ অফিস এলাকায় দালালের আধিপত্যের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেনকে প্রশাসনের সহযোগিতায় দালাল নির্মূলের নির্দেশ এবং আলোচিত দালাল সোহেলকে আটকের জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ।

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও খাবারের মানোন্নয়ন এবং হাসপাতাল থেকে দালাল উচ্ছেদের নির্দেশ। কর্মচারী কর্তৃক এক শিশুর কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নেওয়া ব্যবস্থা সন্তোষজনক না হওয়ায় চেয়ারম্যান উষ্মা প্রকাশ করেন। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর এবং রাতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. হুসাইন শাফায়াতকে নির্দেশ।

অগ্রণী ব্যাংক যশোর শাখার নয়জন গ্রাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিয়ন জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে গাফিলতির জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়। চেয়ারম্যান জসিমের পেনশন ও সম্পদ থেকে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের পরিশোধের নির্দেশ দেন।

স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ফতেপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সালমা খাতুন ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানাকে নির্দেশ। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নাজনীন সুলতানাকে বদলিসহ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ।

অন্যান্য দপ্তরের মধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগের দু’টি সড়কের উন্নয়নকাজ এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদক যশোর কার্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।

গণশুনানির উদ্বোধনকালে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন রসিকতা করে বলেন, “খবরে দেখলাম দুদক চেয়ারম্যানের চেয়ারের দাম দুশ কোটি টাকা। আগে শুনতাম চেয়ারের দাম পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তাহলে ৪৮শ’ কোটি টাকা তো কমেছে!”

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব, এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, "এই জেলা থেকে যখন বদলি হয়ে যাবেন, তখন যদি আপনার জন্য মানুষের চোখের কোনে পানি জমা হয়, তাহলে বুঝবেন কাজ করেছেন। যদি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করেন তাহলে অন্তত বিবেকের কাছে কিন্তু জবাবদিহিতা করতে হবে।"

দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং কোনোভাবেই অনিয়ম দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

গণশুনানিতে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় ৩৭টি দপ্তরের ৭৫টি অভিযোগের শুনানি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

(এসএ/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০২৫)