অপহৃত হননি, স্বেচ্ছায় পঞ্চগড় গিয়েছিলেন সেই খতিব
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : টঙ্গীর মরকুন টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজি অপহৃত হয়েছেন বলে থানায় যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজি স্বেচ্ছায় তিনি পঞ্চগড় গিয়েছিলেন বলে পুলিশের তদন্ত এবং খতিবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ মঙ্গলবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ তাহেরুল হক চৌহান (ক্রাইম এন্ড অপস।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, টঙ্গী পূর্ব থানার মরকুন টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজি অপহৃনের বিষয়ে গত ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ওই ইমাম সাহেবকে অপহৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
পরে মামলার তদন্তকারী টিম টিএন্ডটি কলোনীস্থ বাদি নিজ বাসা হতে ঘটনাস্থল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। তদন্তকালে এবং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজি জানান, খতিব তার বাসা হতে বের হয়ে একাকি হেটে নিমতলী সিএনজি পাম্প পার হয়ে পূর্বাইন থানাধীন মাজুখান ১৪ তলা পার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। বাদি তার এজাহারে ৪/৫ জন ব্যক্তি তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও এই সময়ের তিন ঘন্টার মধ্যে কোন ধরনের অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়নি। ২২ অক্টোবর অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে সময় খতিব মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজির অবস্থান ঢাকা মহানগরীর সোবাহানবাগ এলাকা সংলগ্ন প্লাজা এ.আর এর পাশে অবস্থানরত দেখা যায়। এরপর তিনি ঢাকার গাবতলী শ্যামলী কাউন্টার হতে তিনি নিজে একই তারিখ দুপুর অনুমান ২টার দিকে টিকিটে কেটে ঢাকা হতে পঞ্চগড়গামী ‘শ্যামলী পরিবহন” এর বাসে উঠেন। যাত্রাপথে বাস বগুড়া জেলার শেরপুর থানাধীন পেন্টাগন হোটেলে যাত্রা বিরতি করলে তিনি বাস থেকে নেমে হোটেলে নামাজ পড়ে দ্রুত বাসে উঠেন। বিষয়টি পেন্টাগন হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষনে পাওয়া গেছে।
পেন্টাগন হোটেলে মাগরিবের নামাজের জন্য সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে যাত্রা বিরতি করলে তিনি বাস থেকে হোটেলে নেমে নামাজ পড়ে দ্রুত বাসে উঠেন। পরে রাত অনুমান সাড়ে ১১টা হতে ১২টার ঘটিকার মধ্যে পঞ্চগড় জেলার সর্বশেষ বাস স্টেশনে নেমে তিনি সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন। ঐ সময় তিনি সামনে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ লাইন্স দেখতে পান। তিনি কিছু দূর এগিয়ে অন্ধকার একটি জায়গায় রাস্তার পাশে প্রসাব করতে গেলে, প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে গেলে তিনি তার নিজ হাতে পায়জামা ও পাঞ্জাবি খুলে ফেলেন। কিন্তু কিছুটা ঠান্ডা অনুভব করায় এবং শরীর ক্লাছ থাকায় অবচেতন মনের কারণে তার পক্ষে পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরিধান করা সম্ভব হয় নি। এসময় রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া সোনালী রংয়ের একটি ছোট তলা যুক্ত একটি শিকল তিনি পায়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখতে পান তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আছেন। আশেপাশের উলামায়ে কেরামগণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার অবচেতন মনে তিনি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। খতিবের বক্তব্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অন্য কোন ব্যক্তি/গোষ্ঠি জড়িত রয়েছে কিনা বা কি উদ্দেশ্যে কারো প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। আরো অধিক তদন্তের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এস/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০২৫)
