ধর্ষণ মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো বিকাশ গাইনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ঘর পোড়ানো মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় ধর্ষণ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো বিকাশ গাইনের রিমাণ্ড আবেদন না’মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন শুনানি শেষে আমলী-৫ আদালতের বিচারক রাফিয়া সুলতানা এ আদেশ দেন।
আসামি বিকাশ গাইন শ্যামনগর উপজেলার মীরগাং গ্রামের কমলেশ গাইনের ছেলে।
শ্যামনগরের মীরগাং গ্রামের দীলিপ গাইন জানান, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে শালিসী বৈঠক না মেনে গত ১৭ অক্টোবর রাতে তার পুকুরসহ ৫০ শতক জমি নীল নেট দিয়ে ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষ জঙ্গল ভাংগী ও তার ভাইপো সাগর ভাংগী, নিত্যানন্দ মণ্ডল, তার ছেলে সাগর মণ্ডল, তাদের (জঙ্গল) ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী একই গ্রামের জুব্বার, যতীন্দ্রনগর গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম ও মাহামাদুল ইসলামসহ কমপক্ষে ৫০ জন। এপযর্যায়ে পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে তারা আত্মগোপন করে। ১৭ অক্টোবর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার (দীলিপ) বসতঘর ও রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে ভষ্মিভুত করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় জঙ্গল ভাংগী, সাগর ভাংগী, নিত্যানন্দ মণ্ডল ও গোপাল মণ্ডলকে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। মামলায় জুব্বার, ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলেরামিটার দূরে যতীন্দ্রনগর গ্রামের আনোরুল ও মাহামুদুলকে সাক্ষী করা হয়। ২১ অক্টোবর আসামীরা আদালতে হাজির হয়ে আবেদন করলে বিচারক তা না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত চত্বরে জঙ্গল ভাংগী ও সাগর ভাংগী তাদের (দীলিপ) বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
দীলিপ গাইন আরো জানান, গত ২৬ অক্টোবর ভোর ছয়টার দিকে তার ভাইপো বিকাশ গাইনকে বাড়ি থেকে তুলে এনে ঘর পোড়ানো মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম তাদের (দীলিপ) প্রতিপক্ষ এক ব্যক্তির মাকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানা লক আপে রাখেন। দিনভর নাটকীয়তার একপর্যায়ে সাংবাদিকদের থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান যে, ঘরপোড়ানো ও ধর্ষণ দুটি ঘটনাই সঠিক নয় বলে তার মনে হয়েছে। তাই উভয়পক্ষের বিশিষ্ঠজনদের নিয়ে সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা মনিরের উপস্থিতিতে মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে ঘরপোড়ানো মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় তার বিকাশসহ তার তিন ভাইপোর নামে ২৭ অক্টোবর ধর্ষণ মামলা রেকর্ড করা হয়। ২৭ অক্টোবর বিকাশকে আদালতে পাঠানো হয়। ওই দিনই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান এর সুপারিশক্রমে বিকাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরে উভয়পক্ষের শুনানীর একপর্যায়ে রিমাণ্ড আবেদন না’মঞ্জুর করা হয়। রিমাণ্ড শুনাণিকালে আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২) বলেন, যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা একে অপরের আপন চাচাত ভাই বা ঘরপোড়ানো মামলার বাদির ভাইপো। মামলায় যাদেরকে সাক্ষী করা হয়েছে তাদের মধ্যে আনোয়ারুলের বাড়ি যতীন্দ্রনগর গ্রামে। যাহা মীরগাং থেকে ১০ কিলোমিলার দূরে। সাক্ষী জুব্বারের বাড়ি ভিকটিমের বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে। যার দিয়ে বাদি থানায় এজাহার পাঠিয়েছেন সেই মাহামুদুল এর বাড়ি মীরগাং থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে যতীন্দ্রনগর গ্রামে।
শুনানিকালে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার পক্ষে কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলে উপপরিদর্শক সুদেব পাল।
রিমান্ড না মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের উপপরিদর্শক মাঈনুল ইসলাম।
(আরকে/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০২৫)
