পাঠদান বন্ধ রেখে বিদায় সংবর্ধনা
শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রেখে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন শতাধিক শিক্ষক। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুলী বিশ্বাস জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে য়তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কেড়াইলকোপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি জুলফিকার আলী মোল্লা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিধান চন্দ্র বিশ্বাস এ অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এতে অংশ নেন ওই উপজেলার ৮০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সহ অন্তত ১২০ জন শিক্ষক।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসান, সহকারী শিক্ষা অফিসার জীবন কৃষ্ণ চৌকিদার ও মো. মনিরুজ্জামান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী সকাল ৯ টা থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে । আর বিকাল ৪ টায় স্কুল ছুটি হবে বলে ওই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস।
কেড়াইলকোপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়া মণির পিতা আসাদুজ্জামান বলেন, দুপুর ১টার পর বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর বিদ্যালয়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে উপজেলার সব স্কুলের শিক্ষকরা অংশ নেন। ফলে দুপুর ১টার পর উপজেলার ৮০ বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। এদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস হয়নি। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ক্লাস চলেছে বলে জানতে পেরেছি।
এদিকে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষা কর্মকর্তাকে সংবর্ধনা দেয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুলী বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি জানার পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমাদের দুজনের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়নি। সবাই মিলে শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছি। তবে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে এ আয়োজন করা আমাদের ভুল হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে টুঙ্গিপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. জ্যোৎস্না খাতুন বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদুর রহমানের বিদায় সংবর্ধনার অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়া হয়নি। আর বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে অনুমতি চাইলেও দিতে পারি না। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার মাসের শেষ দিন। অফিসের বাইরের কাজে ব্যাস্ত রয়েছি। আজ অফিসে বসতে পরিনি। তাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা এখনো দেখতে পারিনি। সন্ধ্যার পর অফিসে ফিরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান টুঙ্গিপাড়া থেকে টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলায় বদলি হয়েছেন।
(টিবি/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০২৫)
