রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : হিন্দু সম্প্রদায়ের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের সময় প্রাচীর ভাঙচুর ও গাছড়াছাটি কাটতে বাধা দেওয়ায় ওই পরিবারের পাঁচজন নারীকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ও আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার জেলেখালিতে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ, হামলাকারিদের ভয়ে আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেননি। থানায় গেলে পুলিশ নির্যাতিতদের আটকে রাখার হুমকি দিয়েছে।

আহতরা হলেন- জেলেখালি গ্রামের বাসন্তী পরমান্য, অনিতা পরমান্য, বিভা পরমান্য, কাজলরতা পরমান্য ও সুমিত্রা মণ্ডল।

জেলেখালি গ্রামের ধর্মদাস পরমান্য জানান, তাদের রান্নাঘর ও কাঠঘর ভেঙে বংশীপুরের নৌবাহিনীর সদস্য জহির গাজী তার জমিতে যাওয়ার জন্য গত ৭ ও ৮ অক্টোবর তাদের ঘেরা ও বেড়া ভাংলে তারা বাধা দেন। জহির গাজীর স্ত্রী রুবিনা, ভাই জসিম ও তার ছেলেদের হামলায় তাদের বাড়ির তিন গৃহবধূ আহত হন। এ ঘটনায় থানায় বসাবসি হওয়ার পর থেকে তারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন। কিন্তু বুধবার বিকেলে জহির গাজীর স্ত্রী, জহির গাজীর ভাই জসিম গাজী, জসিমের স্ত্রী ও তাদের তিন সন্তান বুধবার বিকেলে তাদের জমির গাছ গাছালি, ঘেরা ও বেড়া কেটে ফেলে। বাধা দেওয়ায় কাজললতা পরমান্য ও মেয়ে সুমিত্রা মণ্ডলকে পিটিয়ে জখম করা হয়। তাদেরকে নিয়ে থানায় যাওয়ার সময় বংশীপুর এলাকায় জসিম গাজীর লোকজন বাধা দেয়। তাদেরকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। পরে থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জমিতে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে কেন তা জানতে চেয়ে তাদেরকে থানায় আটক রাখার হুমকি দেন।

একপর্য়ায়ে তিনি থানায় অভিযোগ না দিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে রুবিনা খাতুন, জসীম গাজী, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান তাদের সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করে গাছ কাছালি কেটে দেয়। বাধা দেওয়ার তাদের পরিবারের ৫ নারীকে পিটিয়ে জখম করা হয়। সশস্ত্র হামলাকারিদের ভয়ে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় বিশিষ্ঠজনদের অবহিত করা হয়। জাননো হয় সাংবাদিক সামিউল মনিরকে। এরপর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে একই গ্রামের সুশীল মণ্ডলের কাছ থেকে ৩২ শতক জমি কিনে বিষ্টু পরমান্য সেখানে নিজের ও চার সন্তানের বসতঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘর ও কাঠঘর বানিয়ে, গাছ গাছালি লাগিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে ছিলেন। ২০১১ সালে তাদের বাড়ির পূর্ব পাশের বিলে বংশীপুরের জহুরুল গাজীর ছেলে জহির গাজী রাস্তাঘাট বিহীন কম দামে আট শতক জমি কেনেন। তিনি নৌবাহিনীর খুলনা শাখায় সিপাহী হিসেবে কাজ করার সুবাদে গত বছরের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তাদের জমি জবরদখল করে রাস্তা বানিয়ে নিজের জমিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কয়েক মাস আগে তিনি কালিগঞ্জ ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের জমির উপর ঘরবাড়ি ভেঙে ও গাছগাছালি কেটে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেন।

একপর্যায়ে উভয়পক্ষকে সেনা ক্যাম্পে ডেকে শুনানী শেষে সেনা সনা কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে বিষয়টি সমাধানের জন্য কালিগঞ্জ সহকারি ভূমি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন । সহকারি কমিশনার তদন্ত করে তাদের জমির উপর থাকা রান্না ঘর, গোয়ালঘর ও কাঠঘর ভেঙে রাস্তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। এরপরও জহির আবারো সেনাবাহিনীর শরনাপন্ন হলে উভয়পক্ষকে ক্যাম্পে ডাকা হয়। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়।

মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে শালিসি সভা শেষে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে রাস্তার জায়গা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্বান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জহির ওই সিদ্ধান্ত মানেননি। একপর্যায়ে জহির তার মামা সালাম কাগুচীসহ কয়েকজনের সহযোগিতায় তাদের (বিষ্টু) ঘেরা ও বেড়া ভেঙে, গাছগাছালি কেটে রাস্তা বের করার পরিকল্পনা নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলার করার সিদ্ধান্ত নিলে গত ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে জহির নেপথ্যে থেকে তার স্ত্রী রুবিনা ও মামা সালাম কাগুচীসহ কয়েক জনকে দিয়ে তাদের ঘেরা, কলাগাছ কেটে ও গোয়ালঘর ভেঙে রাস্তা বানাতে থাকেন। তারা বাধা দিলে তার তিন পুত্রবধূকে পিটিয়ে জখম করা হয়। ৮ অক্টোবর সকালে অবারো কাজ শুরু করলে সকাল ৯টার দিকে পুলিশ এসে জহিরের অবৈধ কাজ বন্ধ করে দিয়ে সন্ধ্যায় উভয়পক্ষকে থানায় নিয়ে বসানো হয়। সেখানে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা সামিউল মনিরকে ডেকে হামলাকারিদের কোন প্রকার ভৎসনা না করে আগামি ফেব্রুয়ারি মাসে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে নিদ্দিষ্ট পরিমান জমি লিখে দিতে তার (বিষ্টু) ছেলেদের নির্দেশ দেন। এমনকি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০২৫)