স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেছেন, সাংবাদিক ফজলে লোহানী ১৯৭৩ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ধানের শীষের সঙ্গে ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবিলার একটা ব্যাপার আছে। এই মার্কাটার ঐতিহ্য আমরা আগামী দিনে কতটা রক্ষা করতে পারব, সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বিখ্যাত সাংবাদিক, লেখক, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফজলে লোহানীর ৪০তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা’য় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফজলে লোহানী প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মীদল।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, একজন গুণী মানুষ প্রতিভাবান মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছু করতে পারেন, লোহানী সেটা করেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, সাম্প্রতিককালে তার নির্বাচনী পোস্টারটা ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই পোস্টারে লেখা আছে—ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত হতে হলে মওলানা ভাসানী সমর্থিত প্রার্থী ফজলে লোহানীকে ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।

‘এই যে ধানের শীষ মার্কাটা আমি বাছাই করেছিলাম, আমি তখন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির শিক্ষা সম্পাদক হিসেবে মওলানা সাহেবের পাশে কাজ করতাম। তো ১৯৭৩-এর নির্বাচনে মার্কা কী হবে প্রশ্ন এলো। নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা অনেক কিছু করে শেষ পর্যন্ত ধানের শীষটাই বাছাই করলাম। ধানের শীষের সঙ্গে কৃষকের একটা সম্পর্ক আছে। আর কৃষকের সঙ্গে ধানের শীষের একটা সম্পর্ক আছে। বিশাল সম্পর্ক। সেটা পরবর্তীকালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি যখন এই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিএনপিতে যুক্ত হলো, তখন উত্তরাধিকার সূত্রে এই ধানের শীষ মার্কাটা বিএনপি লাভ করল।’

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমি মনে করি, চেতনার দিক থেকে পরিচিতির দিক থেকে সবদিক থেকে ধানের শীষ মার্কাটা খুব গৌরবোজ্জ্বল ও চমৎকার। তবে এই গৌরবোজ্জ্বল মার্কাটার ঐতিহ্য আমরা আগামী দিনে কতটা রক্ষা করতে পারব, সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত। কারণ এই মার্কাটার সঙ্গে ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবিলার একটা ব্যাপার রয়ে গেছে। আজকের বাংলাদেশের প্রধান অন্তরায় আধিপত্যবাদ। এই আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা না করে কিন্তু আমরা একটা স্বাধীন জাতি হিসেবে দাঁড়াতে পারবো না।

তিনি বলেন, এই যে নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিশাল শক্তি কাজ করছে। শেখ হাসিনার বিবৃতি আপনারা শুনেছেন। তো নির্বাচন বানচাল কাদের দ্বারা, কাদের সাহায্যে হতে পারে, সেটাও আপনারা চিন্তাভাবনা করবেন।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, আজকে আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে ফজলে লোহানী সাহেবকে স্মরণ করি এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি যদি আরও কিছুকাল বেঁচে থাকতেন, তাহলে আরও অনেক গঠনমূলক সৃজনশীল কাজ করতে পারতেন। ফজলে লোহানীকে স্মরণ করব তার দেশপ্রেমের জন্য, তার প্রতিভার জন্য, তার সৃষ্টিশীলতার জন্য, তার অবদানের জন্য, তার নিষ্ঠার জন্য, তার চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য এবং সর্বোপরি তার মহৎ চিন্তার চোখ, তিনি যাতে জান্নাতবাসী হন সেই জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো।

ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, মন মত কথা এখনো বলতে পারছি না। এই ৫ আগস্টের পরও যে আমরা বললাম যে আমরা মুক্তভাবে কথা বলি। তারপরও বোধ হয় মুক্তভাবে কথা বলতে পারি না। নানা হিসাব নিকাশ, কে তুষ্ট হয়, কে বিরক্ত হয়, কে পছন্দ করে, কে অপছন্দ করে নানান চিন্তাভাবনা করতে হয়। কাজেই কন্টিনিউয়াসলি আমাদের মত মানুষও যেটাকে বলা হয়—সেলফ সেন্সরশিপ—সাংবাদিকরাও বিভিন্ন স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট আমলে সেন্সরশিপে পড়েছে, আমাকে এখনো সেন্সরশিপ করে চলতে হচ্ছে।

সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মসলেহ উদ্দিন খান মজলিসের সঞ্চালনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নেতা মোয়াজেম হোসেন খান মজলিস, সৈয়দ নাজমুল হাসান, হাসানুল বান্না, মীর শামসুল আলম বাবু প্রমুখ।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ৩১, ২০২৫)