রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পুলিশের আবদার মত ঘরপোড়ানোা মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় বাদির তিন ভাইপোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ধর্ষণ মামলা দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের প্রধান ফটকের সামনে সাতক্ষীরা- আশাশুনি সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় জেলার আরো কয়েকটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। 

বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ও হিন্দু যুব পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে মানবন্ধন কর্মসূচি চলাকালে হিন্দু যুব পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচীব মনোদীপ মণ্ডলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, জেলা পুজা ফ্রন্টের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাড. সুনীল কুমার ঘোষ, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, বাসদ নেতা শিক্ষক নিত্যানন্দ সরকার,বাসদ নেতা অ্যাড, খগেন্দ্রনাথ ঘোষ, সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, জাসদ নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, ক্ষতিগ্রস্ত দীলিপ গাইন, সুচিত্রা গাইন, নির্যাতিত মাধবী মণ্ডল, অ্যাড. আবুল কালাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে শ্যামনগরের মীরগাং গ্রামের পঁচি ভাংগীর ছেলে জঙ্গল ভাংগীর সঙ্গে একই এলাকার দীলিপ গাইন ও তার ভাইদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়ে গেলেও স্থানীয় জব্বার গাজী, যতীন্দ্রনগরের মাহামুদুল ও অনোয়ারুলসহ একটি মহল জঙ্গল ভাংগীদের পক্ষে ওই সমস্যা নতুন করে উস্কে দিয়েছে।

ফলে গত ১৭ অক্টোবর রাত সাাড়ে সাতটার দিকে দীলিপ গাইনের পুকুরসহ ৫০ শতক জমি নীল নেট দিয়ে ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষ জঙ্গল ভাংগী ও তার ভাইপো সাগর ভাংগী, নিত্যানন্দ মণ্ডল, তার ছেলে সাগর মণ্ডল, তাদের (জঙ্গল) ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী একই গ্রামের জব্বার, যতীন্দ্রনগর গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম ও মাহামাদুল ইসলামসহ কমপক্ষে ৫০ জন। একপযর্যায়ে পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে তারা আত্মগোপন করে। ১৭ অক্টোবর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে লুটপাট শেষে দীলিপ গাইনের বসতঘর ও রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে ভষ্মিভুত করা হয়।

এ ঘটনায় দীলিপ গাইন বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জঙ্গল ভাংগী, সাগর ভাংগী, নিত্যানন্দ মণ্ডল ও গোপাল মণ্ডলকে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।২১ অক্টোবর আসামীরা আদালতে হাজির হয়ে আবেদন করলে বিচারক তা না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত চত্বরে জঙ্গল ভাংগী ও সাগর ভাংগী মামলার বাদিপক্ষের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

বক্তারা আরো বলেন, গত ২৬ অক্টোবর ভোর ছয়টার দিকে দীলিপ গাইনের ভাইপো বিকাশ গাইনকে বাড়ি থেকে তুলে এনে ঘর পোড়ানো মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম প্রতিপক্ষ এক ব্যক্তির মাকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানা লক আপে রাখেন। দিনভর নাটকীয়তার

একপর্যায়ে সাংবাদিকদের থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান যে, ঘরপোড়ানো ও ধর্ষণ দুটি ঘটনাই সঠিক নয় বলে মনে করেন। তাই উভয়পক্ষের বিশিষ্ঠজনদের নিয়ে সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা মনিরের উপস্থিতিতে মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে ঘরপোড়ানো মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় ভাইপো পলাশ, তুষার ও বিকাশের নামে ২৭ অক্টোবর ধর্ষণ মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরের জব্বার, ১০ কিলোমিটার দূরের যতীন্দ্রনগর গ্রামের আনোরুল ও মাহামুদুলকে সাক্ষী করা হয়। আটকের ৩৩ ঘণ্টা পর ২৭ অক্টোবর বিকাশকে আদালতে পাঠিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। ৩০ অক্টোবর বিকাশের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর হয়। মানববন্ধন থেকে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মোল্লা ও উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলামকে অপসারন ও পরিকল্পিত ধর্ষণ মামলার সঙ্গে জড়িতদের ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

এ ছাড়া শ্যামগরের জেলে খালিতে বিষ্টু পরামন্যের জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে জহির বাহিনীর বারবার হামলা করলে প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। এখানে পুলিশ ও হামলাকারিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

কালিগঞ্জের চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজারে সুনীল মণ্ডল ও মাধবী মণ্ডলের প্রায় তিন বিঘা জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাছগাছালি কেটে, ফল লুট করে ঘেরা দিয়ে ঘর বানিয়ে জবরদখলের চেষ্টা চালায় একই এলাকার সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর। নির্যাতিতদের জীবন বাঁচাতে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল এলে আদালত তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বশরীরে এসে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। পরবর্তীতে মাধবী মণ্ডলের বসতবাড়ি ও কাঠঘর আগুনি দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সামাদ গাজীর বিরুদ্ধে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে তর তিন ভাইপোকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা ও দীলিপ চক্রবর্তীর স্ত্রী মায়া রানী চক্রবর্তীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। এ ছাড়া ভাইপো হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাঁইহাটি গ্রামের রোমেছা ও তার ছেলে সাঈদকে হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগ রয়েছে সামাদ গাজীর বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় কোন বিচার না হওয়ায় সামাদ গাজীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তার মেয়ের দেবর একজন বড় মাপের যুগ্ম জেলা জজ, তাই তাকে কোন মামলায় হারাতে পারবে না বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন সামাদ গাজী। এমনকি আদালতে বিচার চাইতে এসেও ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সুনীল মণ্ডল।

এ ছাড়া সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা জগন্নাথদেবের মন্দিরের জমি নিয়ে মামলায় মন্দির কর্তৃপক্ষ জয়লাভ করার পরও সংশ্লিষ্ট তহশীলদার আকরাম হোসেনের সহযেগিতায় বাজার কমিটির সভাপতি শাহজাহানের ভাইকে দিয়ে মন্দিরের জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে।

(আরকে/এএস/অক্টোবর ৩১, ২০২৫)