কাপ্তাইয়ে ডলুইছড়ি ম্রখ্যংওয়া বৌদ্ধ বিহার ও ক্যক ম্যাক রাদানা বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দান সম্পন্ন
রিপন মারমা, কাপ্তাই : বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে ২নং রাইখালী ইউনিয়নের ডলুইছড়ি ম্রখ্যংওয়া বৌদ্ধ বিহার ও ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের শিলছড়ি মহাজন পাড়া ক্যক ম্যাক রাদানা বৌদ্ধ বিহারে শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) বিহারে পরিচালনা কমিটি ও দায়ক- দায়িকা উদ্যোগে,দিনব্যাপী পৃথক ভাবে দুটি স্থানে ২নং রাইখালী ডলুইছড়ি ম্রখ্যংওয়া বৌদ্ধ বিহার ও ৫ নং ওয়াগ্গা শিলছড়ি মহাজন পাড়া ক্যক ম্যাক রাদানা বৌদ্ধ বিহারে শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপন করা হয়েছে।
কঠিন চীবর দান উপলক্ষে সকাল থেকে ফুলপুজা, বুদ্ধ পুজা, দেশ জাতি তথা সব প্রাণীর হিত সুখ মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও পঞ্চলশীল গ্রহণের পর বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার, কল্পতরু দান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ড দানসহ নানাবিধ দান করা হয়।
এছাড়া সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন ও ফানুস উত্তোলন করা হয়।
ডলুইছড়ি ম্রখ্যংওয়া বৌদ্ধ বিহার বিহারাধ্যক্ষ তিষা মহাথেরো সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজনিকায় মার্গে ৬ষ্ঠ মহাসংঘ নায়ক, ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে পূজনীয় বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত পামোক্ষা মহাথেরো, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান উজানী পাড়া রাজগুরু মহাবৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সুবন্নলঙ্কার মহাথেরো।
কঠিন চীবর দানোৎসবে আরও উপষ্ঠিত ছিলেন, নারানগিরি ৩২২ নং মৌজা উবাথোয়াই মারমা, ডলুইছড়ি ম্রখ্যংওয়া বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি সভাপতি অংসুউ মারমাসহ বিভিন্ন এলাকায় থেকে পূর্ণাথীরা শ'শ উপস্থিত ছিলেন।
অন্য দিকে ৫ নং ওয়াগ্গা অন্যতম শিলছড়ি মহাজন পাড়া ক্যক ম্যাক রাদানা বৌদ্ধ বিহারেও কঠিন চীবর দান উদযাপন হয়েছে।এই অনুষ্ঠানে শিলছড়ি মহাজন পাড়া ক্যক ম্যাক রাদানা বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত চিংডিটা মহাথেরো সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,নোয়াপাড়া বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত উ:পুঞাওয়াসা মহাথেরো,ধর্ম দেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে ( আবাসিক) নন্দ বংশ ভান্তে প্রধান দায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিলছড়ি মহাজন পাড়া পাইমং মারমা (কার্বারি) এসময় ধর্মীয় ভক্তিতে মুখর ছিল দুই এলাকা দুই স্থানে অনুষ্ঠিত এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে ভক্তবৃন্দের মাঝে ছিল গভীর শ্রদ্ধা, ভক্তি ও উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ আয়োজনে অংশ নেন শতাধিক ভিক্ষু ও অসংখ্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ। আয়োজকরা জানান, কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বোচ্চ দানের মধ্যে অন্যতম। এ দানের মাধ্যমে তারা সৎকর্মে অংশগ্রহণ ও ধর্মীয় পুণ্য অর্জনের সুযোগ পান।
ডলুইছড়ি ম্রখ্যংওয়া বৌদ্ধ বিহার বিহারাধ্যক্ষ তিষা মহাথেরো জানান, শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানটি এলাকার ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ। এই আয়োজনে যে শৃঙ্খলা, ঐক্য ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি আয়োজক কমিটি, দায়ক দায়িকা, পূর্ণ ও সকল ধর্মপ্রাণ ভক্তদের ধন্যবাদ জানাই। এই চীবর দান যেন সকল প্রাণীর মঙ্গল ও শান্তির বার্তা বয়ে আনে, এ কামনা করছি।
শিলছড়ি মহাজন পাড়া ক্যক ম্যাক রাদানা বৌদ্ধ বিহারে সাধারণ সম্পাদক তপন মারমা বলেন, আষাঢ়ি পূর্ণিমার পরদিন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী ওয়া বা বর্ষাব্রত পালন শুরু হয়েছিল, তিন মাস পর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে প্রবারণা পূর্ণিমা। এরপর বিহারে বিহারে শুরু হয়েছে কঠিন চীবর দানোৎসব। চলবে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত।’
(আরএম/এএস/নভেম্বর ০২, ২০২৫)
