মাদারীপুরে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক
মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে শ্বশুরবাড়িতে দীপ্তি মন্ডল (২১) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। যৌতুকের দািবতে গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে ও নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্নও আছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেন। আজ রবিবার দুপুরে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল মর্গে নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদ এলাকার বাদামতলা মন্ডল বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই নিহতের স্বামী তাপস মন্ডল ও শাশুড়ি সরস্বতী মন্ডল পলাতক আছে।
নিহত দীপ্তি মন্ডল শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার জয়নগর হিন্দুকান্দি এলাকার প্রদীপ মন্ডলের মেয়ে। তিনি মাদারীপুর শহরের পৌর এলাকার বাদামতলার তাপস মন্ডলের স্ত্রী। তাপস মন্ডল স্থানীয় আদালতে মুহুরি হিসেবে কর্মরত আছেন। নিহত দিপ্তীর এক বছর বয়সের একটি মেয়ে আছে।
পুলিশ, পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর গ্রামের প্রদীপ মন্ডলের মেয়ে দিপ্তী মন্ডলের বিয়ে হয় মাদারীপুর শহরের বাদামতলা এলাকার নিতাই মন্ডলের ছেলে তাপস মন্ডলের সাথে। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ দেয়া হলেও যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই দীপ্তিকে মারধর করা হতো। খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকতো। এ নিয়ে দিপ্তী পরিবারের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। রাগ করে কয়েক বার বাবার বাড়ি চলে যায়। তবুও এর কোন সমাধান হয়নি।
শনিবার দুপুরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধে। পরে সন্ধ্যায় প্রতিবেশিরা তার লাশ ঘরের মধ্যে দেখতে পায়। পুলিশ খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে স্বামী তাপস মন্ডলসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক আছেন।
নিহত দিপ্তীর কাকা গোকুল মন্ডল বলেন, আমার ভাতিজিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত তাপস ও তার পরিবারের লোকজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নিহত দিপ্তীর বাবা প্রদীপ মন্ডল বলেন, বিয়ের সময় ৫ ভরি স্বর্ণ ও আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র দিয়েছি। প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আমার একটাই মেয়ে। কিন্তু এভাবে মেয়েকে মেরে ফেলবে বুঝতে পারিনি। আমার মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর ঘরের লাশ রেখে তাপস ও তার মা পালিয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এই ঘটনার সাথে যারা যারা জড়িত আছে সবার ফাঁসি চাই।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আদিল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জেনেছি মৃত্যুর আগে স্বামী-স্ত্রী দুইজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরিবার থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত নিহতের স্বামী তাপস মন্ডল ও শাশুড়ি সরস্বতী মন্ডল পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
(এএসএ/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২৫)
