রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গরু ছেড়ে দিয়ে চাষ করা নেপিয়ার ঘাস ঘাওয়ানোর প্রতিবাদ করায় এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মা ও ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। এ সময় বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে ১০ ভরি সোনার গহনা, নগদ তিন লাখ টাকাসহ ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে সাতক্ষীরা সদরের দক্ষিণ ফিংড়ি গ্রামের গ্রাম ডাক্তার সুদীপ মণ্ডলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ তাপসী সরদার ও তার ছেলে তনয়কে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দক্ষিণ ফিংড়ি গ্রামের সুদীপ মণ্ডলের স্ত্রী তাপসী দফাদার (৪৫) জানান, একই গ্রামের কিয়াম সরদারের ছেলে সাঈদুর রহমান তাদের বাড়ির পাশে একটি বাড়িসহ জমি কেনেন। তিন মাস আগে থেকে সাঈদুর তার গরু ছেড়ে দিয়ে তাদের (তাপসী) লাগানো নেপিয়ার ঘাস খাওয়াতেন। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হতো না। রবিবার বিকেল তিনটার দিকে সাঈদুর রহমান তার দুটি গরুর দড়ি খুলে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গরু দুটি তাদের লাগানো ঘাস খাওয়া শুরু করলে ছেলে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তনয় মণ্ডল তাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে বচসার একপর্যায়ে সাঈদুরের সঙ্গে তনয়ের হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে তনয়ের বাবা ছুুঁটে গেলে সাঈদুর তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বাড়ি চলে যান। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানসহ কয়েকজনকে অবহিত করেন।

খবর পেয়ে প্রতিবেশি রফিকুল, মফিজুল, রাশেদ , শফিকুলসহ তাদের বাড়িতে ছুঁটে আসেন। বিকেল চারটার দিকে তারা চলে যান। একই সময়ে তার স্বামী সুদীপ মণ্ডল তার চেম্বারে চলে যান। এরপরপরই তাদের জমির উপর দিয়ে ও রাস্তা দিয়ে সাঈদুর , তার স্ত্রী, দুই মেয়ে, মাসুদুল, আবুল হোসেন, তার দুই ছেলে, সামছুর ও তার ভাই আবু সানাসহ দেড় শতাধিক নারী ও পুরুষ হাতে দা’ লাঠি নিয়ে লোহার রড নিয়ে করতে করতে তাদের বাড়িতে সামনে আসে। তার স্বামী সুদীপ ও ছেলে তনয় কোথায় আছে জানতে চান তারা। তারা বাড়িতে নেই বলার সাথে সাথে প্রাচীর টপকে হামলাকারিরা তাদের বাড়িতে ঢোকে। একপর্যায়ে তাকে ঘর থেকে চুলের মুঠো ধরে টানতে টানতে ও মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে আসে। ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছেলে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এ সময় হামলাকারিরা তার বাড়ির দরজা ও জানালাসহ আলমারি ও ড্রেসিং টেবল ভাংচুর করে। প্রাচীরের ফটকের লোহার রড বাঁকা করে ফেলে। লুট করে তিনটি মোবাইল ফোন, পরিহিত জামা, কাপড়সহ ব্যবহৃত জিনিসিপত্র। লুটকৃত মালামালের মূল্য আনুমানিক ২০ লাখ টাকা।

এরপর তারা লোহার রড দিয়ে তার (তাপসী) সারা শরীর পিটিয়ে জখম করে। ছেলে তনয়কে বাড়িতে তুলে নিয়ে পিটিয়ে জখম করে সাঈদুর। এ সময় স্বামী সুদীপ মণ্ডলকে যেখানে পাবে সেখান থেকে তুলে এনে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। সহিংসতা এত ভয়াবহ ছিল যে, শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে হাাজির হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। তবে হামলাকারিরা তাদের বাড়ি প্রেট্রোল দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদের প্রতিরোধের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

হামলা ও লুটপাটের বিষয়টি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে থানাকে অবহিত করা হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ এসে তাকে ও ছেলে নয়নকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তনয় বাড়ি চলে আসে।

ফিংড়ি গ্রামের আসাদুল ইসলাম ও শুভাশীষ সরকার জানান, সাঈদুরের নেতৃত্বে যেভাবে ডাঃ সুদীপ মণ্ডলের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে তাতে এলাকায় কোন আইনশৃঙ্খলা আছে বলে তারা মনে করেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এদেশ থেকে হিন্দু শূন্য হতে দুই বছরও লাগবে না।

ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান জানান, যেভাবে সুদীপ মণ্ডলের বাড়িতে সাঈদুরের নেতৃত্বে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে সাঈদুর রহমান জানান, গরুর ঘাস খাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক জানান, গৃহকর্তা সুদীপ মণ্ডল সোমবার থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর উপপরিদর্শক নিশাদ ঘটনাস্থলে গেছেন। এজাহারটি একটু বড় আকারে হয়েছে। তাই যথাযথ তদন্ত শেষে মামলা রেকর্ড করা হবে।

(আরকে/এএস/নভেম্বর ০৪, ২০২৫)