সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : লাগামহীনভাবে পাবনার ঈশ্বরদী বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। শহরের বাজার ও গ্রামাঞ্চলের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০-৪৫ টাকা বেড়ে ১০০-১১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ সাত দিন আগেও পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। এতে সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
আড়তদার এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের শেষ সময়, তাই সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বীজের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়াও পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মূলত: দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে। পেঁয়াজ আমদানির আইপি (আমদানি অনুমোদন) দেয়া না হলে সামনের দিনে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ঈশ্বরদীর বাজারে মান ভেদে পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে গেছে। উপজেলার গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। রবি মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের চারা (মুড়িকাটা) রোপণ করা হয়। এ জাতের পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরণ করা যায় না। উৎপাদন মৌসুমেই এসব পেঁয়াজ বিক্রি ও ভোগ করে ভোক্তারা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ উত্তোলন শেষ হলে একই জমিতে হালি বা বীজ পেঁয়াজ রোপণ করা হয়। এ পেঁয়াজ মাচা বা বিভিন্ন সংরণ ঘরে দীর্ঘদিন মজুদ রাখা হয়। দেশে পেঁয়াজ আমদানিতে আইপি না দেওয়ায় দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। একটা নির্দিষ্ট দামে পেঁয়াজের দাম দীর্ঘদিন স্থির ছিল। কিন্তু মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আড়তদার সঞ্জয় সরকার জানান, এখন মৌসুমের শেষে মজুদ কমে যাওয়ায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। তাছাড়া চাষিদের বীজের চাহিদাও হঠাৎ করে বেড়েছে। গত শুক্রবার পাইকারি পর্যায়ে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা।
শহরের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আজাদ বলেন, গত দশ মাস দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় দাম স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে মোকামগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে দামে। দীর্ঘদিন মাচায় মজুদ থাকায় শুকিয়ে পেঁয়াজের ওজন কমে যায়। মুনাফা বজায় রাখতে এ কারণে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানির আইপি (আমদানি অনুমোদন) দেয়া না হলে সামনের দিনে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান তিনি।
দাশুড়িয়ার কৃষক রায়হান বলেন, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের উত্তোলন শুরু হবে। তখন সরবরাহ বাড়লে দাম ধারাবাহিকভাবে কমবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মমিন বলেন, এবারে অতিবৃষ্টির কারণে আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসেনি। পেঁয়াজের মজুদ কমে গিয়েছে। এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষক ও ব্যাপারী পর্যায়ে ভালো লাভ পাওয়ায় আগামী মৌসুমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেউ কেউ আগের তুলনায় বাড়তি জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। ফলে মৌসুমের শেষ দিকে দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে বলে জানান তিনি।
(এসকেকে/এসপি/নভেম্বর ০৬, ২০২৫)
